ক্ষোভ: শোকস্তব্ধ রাজেশের মা। দাড়িভিটে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
ঘটনার দু’দিন পার হয়েছে। তার পরেও অফিসের বিভিন্ন আসবাব থেকে জরুরি কাগজপত্র যেমনকার তেমনই পড়ে রয়েছে স্কুল চত্বরে। এমনকী, সাইকেল স্ট্যান্ডে রাজ্য সরকারের ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে পাওয়া সাইকেলগুলিও মালিকবিহীন অবস্থায় পড়ে ছিল ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলের চত্বরে।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্কুলে কোনও প্রশাসনিক কর্তা যাননি। এখনও থমথমে রয়েছে এলাকার পরিস্থিতি। দাড়িভিট বাজারে কোনও দোকান খোলেনি। ওই স্কুলের পাশেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল রয়েছে। এ দিন সেগুলিও বন্ধ ছিল। এ দিনও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের দাবিতে অনড় থাকতে দেখা গিয়েছে। তারা এ দিন পথ অবরোধও করে। তবে সেখানে পুলিশকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন ভোররাতে এসে বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে অত্যাচার করছে পুলিশ। এ দিন ভোরেও গ্রাম থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।
এ দিন দাড়িভিট গ্রামে পুলিশ পিকেট দেখা না গেলেও গোলাবাড়িতে পুলিশ পিকেট ছিল। দাড়িভিটের দিকে কোনও গাড়ি গেলেই সেটি থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। দাড়িভিট ও তার পাশের গ্রাম সুখানিভিটায় শোকের পরিবেশ। সুখানিভিটার বাসিন্দা তথা বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র রাজেশ সরকারের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে তার পরিবার। রাজেশের মা ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘আমি আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। আমার যা যাওয়ার গিয়েছে। আমার এখন একটাই দাবি, দোষীদের শাস্তি চাই।’’ একই দাবি মৃত তাপস বর্মণের পরিবারের লোকজনেরও। পরে তদন্তের নির্দেশ এলে যাতে তদন্তকারীদের অসুবিধে না হয় সেজন্য দু’টি দেহ দাড়িভিটের দলঞ্চা নদীর পাড়ে কবর দেওয়া হয়। মৃত তাপস ও রাজেশ দাড়িভিট স্কুলে একই ক্লাসে এক সময় পড়ত। তাপস ব্যবসার কাজে নেমে পড়ায় মাঝে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেয়। তবুও তাদের বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। দুই দেহ একই জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মারা গিয়েও দুই বন্ধুর ঠাঁই একই জায়গায় হয়েছে।
অন্যদিকে, দাড়িভিট গ্রামে এ দিন দুপুরে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত দোকানপাট, স্কুল কিছুই খুলতে দেওয়া হবে না।
এ দিন দাড়িভিট স্কুলে গ্রাম সংযোগ প্রকল্পের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা ছাড়াও অন্যান্য জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। দাড়িভিট স্কুলে গোলমালের জেরে সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy