রাজার শহর কোচবিহারের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাগরদিঘিকে এ বার উত্তরের বিরল প্রজাতির মাছের সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কোচবিহার জেলা মৎস্য দফতর এ নিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে।
দফতর সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে তোর্সা থেকে আত্রেয়ী, তিস্তা থেকে মহানন্দা, উত্তরের বিভিন্ন জেলার নদীর রকমারি মাছের পাশাপাশি খালবিল, পুকুর, জলাশয়ের বিভিন্ন মাছের প্রজাতি সংগ্রহ করে ছাড়া হবে। একটি নির্দিষ্ট জলাশয়ে রকমারি মাছ রক্ষার ভাবনায় এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রাথমিক ভাবে খরচ হতে পারে আট লক্ষ টাকা। জলশোধন থেকে মাছ সংগ্রহ, সব বিষয়ই রয়েছে তাতে।
মৎস্য দফতরের এই উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, ‘‘সাগরদিঘির আকর্ষণ বাড়ানোর
চেষ্টা চলছে। মিলবে গবেষণার সুযোগও। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’’ জেলা মৎস্য আধিকারিক অলোকনাথ প্রহরাজের কথায়, ‘‘অনুমোদন পেলে পুজোর আগেই কাজ শুরু করব। সংরক্ষণের জন্য প্রথম দফায় মোট ১২৬টি প্রজাতির মাছ দিঘিতে ছাড়া হবে। পরে অবশ্য সেই সংখ্যা বাড়বে।’’
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন জলাশয়ে ৩৯৪টি প্রজাতির মাছ রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে, বেশ কয়েকটি বিলুপ্তির মুখে। বাণিজ্যিক ভাবে বড়জোর ৩৮টি প্রজাতির মাছ চাষ হয়। সব কিছু মাথায় রেখেই মৎস্য সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে সাগরদিঘিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রকল্প অনুমোদন হলেই সাগরদিঘিতে মাছ ধরা পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। দিঘির চারদিকে সাইনবোর্ড, ব্যানার লাগানো হবে। বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরাও। এমনকি, রাজ্য মৎস্য দফতরের পাঠানো প্রস্তাবে জানান হয়েছে, নজরদারি এড়িয়ে সাগরদিঘিতে কেউ মাছ ধরার চেষ্টা করলে দু’হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। তবে আগ্রহীরা মাছের খাবার দিতে পারবেন। তুলতে পারবেন ছবিও। তবে খাবার কিনতে হবে অনুমোদিত দোকান থেকেই।
দফতর সূত্রের খবর, সংরক্ষণের আওতায় রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা, পাবদা, ল্যাটা, শিঙির মতো নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। বোরোলির মতো নদীয়ালি মাছেরও সংরক্ষণ করা হবে। চাঁদা, মৌরালা, রিঠা, বেলে, আড়, বোয়ালের মতো মাছও প্রথম ধাপে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৮০৭ সালে মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণের আমলে কোচবিহার কাছারি মোড়ের কাছে ওই দিঘি খনন করা হয়েছিল। এক সময়ে দিঘির জল পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করা হত। অভিযোগ, ক্রমাগত দূষণে সেই দিঘি এখন ধুঁকছে। সংরক্ষণ কেন্দ্র হলে রক্ষণাবেক্ষন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy