Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খুশিতে ভাসল কাওয়াখালি

দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠিকনিকাটা-কাওয়াখালি জমি আন্দোলনের নেতা মনিমোহন বিশ্বাস। সোমবার বিকালেই রাজ্য মন্ত্রিসভা কাওয়াখালির অনিচ্ছুক ৫২টি পরিবারকে সাড়ে ১১ একর জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত নেয়।

মিষ্টিমুখ: জমি ফিরে পাওয়ার ঘোষণার পরে দেদার মিষ্টি খেয়ে মাতলেন বাসিন্দারা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মিষ্টিমুখ: জমি ফিরে পাওয়ার ঘোষণার পরে দেদার মিষ্টি খেয়ে মাতলেন বাসিন্দারা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০৭
Share: Save:

কোলে লাল জ্যাকেট পরা ১৩ মাসের ছেলে কৌস্তভকে নিয়ে মাঠের এদিক-ওদিক ঘুরে বেডাচ্ছিলেন দীনেশচন্দ্র হালদার। পিছনে পিছনে স্ত্রী সুমিতা।

মঙ্গলবার ভরদুপুরে কোলের ছেলেকে দেখাচ্ছিলেন, মাঠ, বড় রাস্তা, কাঁঠাল গাছ। এখনও কথা ফোটেনি কৌস্তবের। দীনেশবাবু বললেন, ‘’১৩ বছর মাটি কামড়ে পড়েছিলাম। খুশির দিনে ছোট্ট ছেলেটাকে এনে জমি দেখালাম। ভবিষ্যতে ওকেই তো এর রক্ষা করে যেতে হবে।’’

দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠিকনিকাটা-কাওয়াখালি জমি আন্দোলনের নেতা মনিমোহন বিশ্বাস। সোমবার বিকালেই রাজ্য মন্ত্রিসভা কাওয়াখালির অনিচ্ছুক ৫২টি পরিবারকে সাড়ে ১১ একর জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত নেয়। এক দশকের বেশি সময়ে আন্দোলন, বুলডোজারের সামনে দাঁড়ানো, পুলিশের ভয়, আমলাদের সতর্কবার্তা বা একাধিক বৈঠকের কথা বলেই চলছিলেন মনিবাবু। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, সুকুমার মণ্ডল, শীলা তালুকদার, সুজাতা মণ্ডলেরা। সকলে বললেন, ‘‘পাশের থেকে লোক এক এক করে কমে যাচ্ছিল। মনোবল হারাইনি। দিদি আমাদের কথা দিয়েছিলেন, কথা রেখেছেন।’’

আন্দোলনের সময়ই মারা গিয়েছেন রাজ্যের এক মন্ত্রীর আত্মীয় শিপ্রা ঘোষ। তাঁর জামাই দীপেন দেবনাথও এদিন এসেছিলেন। তিনি জানান, শাশুড়ি মা এদিনটা দেখে যেতে পারলেন না। আমাদের জমি দখলও হয়েছিল। প্রশাসন সেটাও খালি করবে বলেছে।

ততক্ষণে রসগোল্লার টিন পৌঁছে গিয়েছিল, কাওয়াখালির মাঠে। মিষ্টিমুখের সঙ্গে চলে কোলাকুলি। সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিয়ে স্লোগান, ব্যানার টাঙানো হয়। বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতুল চক্রবর্তী, জ্যোৎস্না অগ্রবাল, বেদব্রত দত্ত ও দীপক শীলেরা। বুলডোজার আটকানো থেকে বিক্ষোভে সামিল ছিলেন সকলে। সরকার বদল হলেও অবস্থান বদল করেননি জ্যোৎস্নাদেবী, দীপকবাবুরা। সিঙ্গুরের দুই বছর আগে শুরু হওয়া আন্দোলন চলেছে ১৩ বছর। এ দিন ৪ জনকেই ডেকে আনেন আন্দোলনের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে এটা হত না।

মনিমোহনবাবু জানান, দিনের পর দিন কাঠাল গাছের তলায় বৈঠক। হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারি দফতরে ঘোরাফেরা কী হয়নি। জ্যোৎস্নাদিরা পাশে থেকেছে। মন্ত্রী গৌতম দেব, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও সবসময় পরামর্শ দিয়েছেন। তাই এই জয়। এ বার নতুন লড়াই শুরু। কৃষি জমি বাস্তু জমি হয়ে গিয়েছে। বাড়ি, বাজার, আশ্রম বানাতে হবে।

২০০৪ সালে কাওয়াখালিতে ৩০২ একর জমি অধিগ্রহণ শুরু করে বাম সরকার। আবাসন, একাধিক হাসপাতাল, গ্রামীণ ও আর্বান হাট, ফিল্মসিটি-সহ একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। আন্দোলনে নামেন ১৮০০ মত জমি মালিক। নকশাল নেতা কানু সান্যাল থেকে কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সিও অবস্থান বিক্ষোভে একসময় ছিলেন। তবে ২০০৬ সাল থেকে তৃণমূল আন্দোলনের পুরভাগে ছিল। সুরমা দাস, মায়া সাহা’র মত জমির মালিকেরা জানান, তিনটি জমি থেকে আমাদের অংশ দেওয়া হবে বলা হয়েছে। কবে দেওয়া হবে, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Reluctant farmers Land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE