Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অন্য শিকড়ের টানে মুখেভাত

জন্মের পর থেকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের কোলেপিঠেই বড় হচ্ছে রিয়া, ঋত্বিকা, ঋক। তাঁরাই বুধবার মুখে ভাত দিলেন তিন শিশুর। রীতিমতো পুরোহিতের পরামর্শ নিয়ে, তিথি দেখে ঠিক হয় শুভদিন।

আহ্লাদি: হাসপাতালে নার্সদের কোলে ওই তিন খুদে। নিজস্ব চিত্র

আহ্লাদি: হাসপাতালে নার্সদের কোলে ওই তিন খুদে। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

শিকড়ের সঙ্গে যোগ ছিন্ন হয়েছে জন্মের মুহূর্তে। কিন্তু তাতে বেড়ে ওঠা আটকায়নি। পরিবার থেকে ছুড়ে দেওয়া দুধের শিশুগুলিকে সন্তান স্নেহে শুধু লালন করাই নয়, বয়স ছ’মাস গড়াতেই ওদের দুধের মুখে ভাত তুলে দিতে উৎসবও করলেন ওদের স্বজনরা।

জন্মের পর থেকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের কোলেপিঠেই বড় হচ্ছে রিয়া, ঋত্বিকা, ঋক। তাঁরাই বুধবার মুখে ভাত দিলেন তিন শিশুর। রীতিমতো পুরোহিতের পরামর্শ নিয়ে, তিথি দেখে ঠিক হয় শুভদিন। কেনা হয় রুপোর বালা, রুপোর হার। আনা হয় নতুন থালা-বাটি-গ্লাস। বেলুন দিয়ে সাজানো হয় ডাক্তার এবং নার্সদের কেবিন। সকাল সকাল রিয়া, ঋত্বিকা এবং ঋককে নতুন জামা পরিয়ে, চন্দনের ফোঁটা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতাল লাগোয়া কালী মন্দিরে। পুজো দিয়ে প্রসাদ নেওয়া হয়। তারপর হাসপাতালে হয় অন্নপ্রাশন।

ওই তিন শিশুর একজনকে জন্মের পর হাসপাতালে ছেড়ে চলে যায় তার মা। বাকি দু’ জনের একজনকে একটি মন্দিরের সামনে থেকে এবং অন্যজনকে ব্যাঙ্কের একটি শাখার সামনে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। এসএনসিইউ’তে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করার পর সেখানকার নার্স, চিকিৎসকদের কোলেপিঠেই মানুষ হচ্ছে তারা। এতদিন তাদের খাবার বলতে ছিল শুধু বেবিফুড। কিন্তু ছয়, সাত মাস বয়স হচ্ছে দেখে তাদের ভাত খাওয়ানো জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। তারপরেই শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি।

এসএনসিউইউ’র সিস্টার ইনচার্জ কল্পনা মিশ্র-বাড়ি থেকে নিজে হাতে রান্না করে এনেছিলেন ভাত, মুগের ডাল, আলু, পটল, বেগুন-সহ ছ’রকমের ভাজা আর কাতলা মাছ। নিয়ম মেনে নতুন থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় সেই খাবার। তারপর নতুন জামা, রুপোর হার, বালা পরে সুপার অমিতাভ মণ্ডল, চিকিৎসক অমিত চক্রবর্তী এবং প্রসেনজিৎ সরকারের কোলে বসে প্রথম ভাত খেল ঋত্বিকা, ঋক এবং রিয়া। উপস্থিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি হয়ে রইল সেই দৃশ্য।

মুখেভাতে এসএনসিইউতে চিকিৎসাধীন সমস্ত শিশুর মায়েদের দেওয়া হল মিষ্টির প্যাকেট। শিশু বিভাগে বিলি হল চকোলেট। ছিল মিষ্টি, ঝুড়িভাজা ও দেদার চা-কফির ব্যবস্থাও। চিকিৎসক,নার্স, ও কর্মীদের দুপুরের খাবার ব্যবস্থাও করা হয়। মেনু ছিল ভাত, ডাল, ভাপে ইলিশ, পাঠার মাংস, চাটনি ও মিষ্টি।

খুশি হাসপাতালের সুপার। তিনি বলেন, ‘‘এসএনসিইউ’র চিকিৎসক-নার্সদের কাছই শিশুরা বড় হচ্ছে। তাই তাঁরা মুখে ভাত করতে চাইলে বাধা দিইনি। এতে বাচ্চাগুলোর প্রতি ভালবাসা, দায়িত্ব বোধ বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE