ভেসে যাওয়া ঘর দেখাচ্ছেন আরতি রায়। নিজস্ব চিত্র
হাত উঁচিয়ে নিজের ঘরদোর কোথায় ছিল তা দেখাচ্ছিলেন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই পারঅনুপনগরের আরতি রায়। কোথায় ঘরবাড়ি! শুধুই জল। যতদূর চোখ যায় গঙ্গার উথালপাতাল ঢেউ। আরতি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ওইখানেই ঘরদোর ছিল আমাদের। উঠোন ছিল। তুলসী মঞ্চ ছিল। লাউমাচা ছিল।’’ বলতে বলতে চোখে জল আসে তাঁর।
ভিটেমাটি হারিয়ে পাঁচ ছেলেকে নিয়ে সেই সময় আশ্রয় নিয়েছিলেন গ্রামেরই বাসিন্দা অমর রায়ের একফালি জমিতে। সেখানে টিনের দু’টি ছোট্ট ঘর করে দিন গুজরান করছেন। নিজে অন্যের জমিতে আশ্রিতা হলেও নিজের সেই আস্তানাতেই আরতি আশ্রয় দিলেন গ্রামেরই এক বানভাসি পরিবারকে। আরতি এখন যেখানে রয়েছেন তার সামনেই গঙ্গায় বোল্ডার পিচিং করে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করেছে সেচ দফতর। এরই ঠিক উজানের দিকে পারপরানপাড়ার শুরুতেই বাড়ি পেশায় মৎস্যজীবী গণেশ বিশ্বাসের। গঙ্গার জল মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রায় সাতদিন আগে জল ঢুকে পড়ে গণেশের বাড়িতে। বুধবার এক কোমরেরও বেশি জল তাঁর ঘরে। ঘরের চৌকিও ডুবে গিয়েছে। রান্নাবান্না সব বন্ধ। কিন্তু, আশ্রয় নেবেন কোথায়? তাই একটি নৌকা জোগাড় করে কিছু আসবাব ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রওনা হয়েছিলেন আশ্রয়ের খোঁজে। তাঁদের অবস্থা দেখে আরতি গণেশদের নিজের একটি ঘর ছেড়ে দেন। এখন পাঁচ ছেলেকে নিয়ে একটি ঘরেই থাকছেন আরতি। অন্য ঘরে আশ্রিত গণেশের পরিবার।
গণেশই বললেন, ‘‘দু’টি ঘরে আরতিদেবীদেরই ঠাঁই নেই অবস্থা। তাও তিনি যে আমার বিপদের দিনে পরিবার-সহ ঠাঁই দেবেন তা ভাবতেই পারিনি।’’ পারদেওনাপুর শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুস্মিতা রবিদাস বলেন, ‘‘মানবিকতা যে এখনও হারিয়ে যায়নি, আরতি তা ফের প্রমাণ করলেন। তাঁকে কুর্নিশ জানাই।’’ সেখানে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ দেখভাল করছেন সেচ দফতরের কর্মী চিরঞ্জীব মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে নিজেদেরই থাকার জায়গা হয় না, সেখানে অন্য একটি দুর্গত পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে আরতি যে মহানুভবতার পরিচয় দিলেন তা সত্যিই অনুপ্রেরণার যোগ্য।’’
এসবে অবশ্য কৃতিত্ব নিতে রাজি নন আরতি। তিনি বলেন, ‘‘মানুষই তো মানুষের পাশে দাঁড়াবে। জল নামলেই তো ওঁরা চলে যাবেন।’’ তবে, গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘স্বামী আগেই মারা গিয়েছিলেন। স্বামীর ভিটেতেই বাস করতাম তিনি। ২০১৬ সালে গঙ্গা সেই পুরো ভিটে নিয়ে নিল। ঘরটুকুও ভেঙে নেওয়ার সময় দেয়নি।’’ তাঁর স্নাতকোত্তর পড়ুয়া বড় ছেলে রামচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘মা অন্য এক দুর্গতকে আশ্রয় দিয়ে ঠিক কাজই করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy