Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সামান্য কারণেই কেন মেডিক্যালে রেফার?

ছোট-বড়-মাঝারি নানা হাসপাতাল। কিছু জায়গায় গেলেই ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মহকুমা থেকে জেলায়, সেখান থেকে মেডিক্যালে। এমন ছোটাছুটিতে হয়রান অনেক রোগী ও পরিবারের লোকজন। হাসপাতাল থেকে নিরুপায় হয়ে রেফার করা হয় বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। অথচ অনেকের কটাক্ষ, রেফার-রোগের সংক্রমণ হয়েছে অনেক হাসপাতালেই। তা নিয়ে দ্বিতীয় কিস্তি। আজ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।রাত ৯টা। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী দেখছিলেন কয়েক জন চিকিৎসক।

কাতর: মালদহ মেডিক্যালে পায়ের ব্যাথায় কাবু বাবাকে নিয়ে আনোয়ার। —নিজস্ব চিত্র।

কাতর: মালদহ মেডিক্যালে পায়ের ব্যাথায় কাবু বাবাকে নিয়ে আনোয়ার। —নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৮
Share: Save:

রাত ৯টা। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী দেখছিলেন কয়েক জন চিকিৎসক। হবিবপুর থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে পথ দুর্ঘটনায় জখম এক রোগীকে নিয়ে জরুরি বিভাগে হাজির পরিজনেরা। সেখান থেকে রোগীকে পাঠানো হল অপারেশন থিয়েটারে। আহত ব্যক্তির মাথায় পড়ল তিনটি সেলাই।

কিন্তু সামান্য এই চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজে? কর্তব্যরত চিকিৎসক জানতে চাইলে জখম ব্যক্তির ছেলে দীপক সরকার বললেন, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ওখানে শুধুমাত্র ব্যান্ডেজ করেই রেফার করে দিলেন মেডিক্যালে। আমাদের খরচ এবং হয়রানি দুটোই হল।’’ কালিয়াচক থেকেও বাবাকে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে হাজির আনোয়ার হোসেন। তাঁর ছেলের কথায়, ‘‘আচমকা বাবার পায়ের হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়ে যায়। গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মেডিক্যালে রেফার করে দেন। এখানে বাবার পায়ের এক্স-রে করিয়ে ওষুধ দিলেন ডাক্তার।’’

জেলার অন্য গ্রামীণ হাসপাতালগুলি থেকেও সামান্য কারণে রোগীদের তাঁদের কাছে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে চার দিক থেকে এত রেফারের জেরে রোগীদের ভিড়ে থিকথিক করছে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে মূল বিভাগ। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বহির্বিভাগে গড়ে চার হাজার এবং শুক্রবার ও শনিবার গড়ে আড়াই হাজার করে রোগী চিকিৎসার জন্য ভিড় জমান। মূল বিভাগে হাজারখানেক শয্যা রয়েছে। তবে তিন গুণ রোগী ভর্তি রয়েছেন। সার্জিক্যাল, মেডিসিন বিভাগগুলিতে এক শয্যায় দুই থেকে তিনজন করে রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া, মেঝেতেও রয়েছেন রোগীরা। হাজার হাজার রোগীর দৈনিক চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ঘুম ছুটছে কর্তৃপক্ষের।

কলেজ ও হাসপাতালের সুপার তথা সহ অধ্যক্ষ অমিতকুমার দাঁ বলেন, “গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে সামান্য কারণে রেফারের রোগ কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। আমরা জেলার প্রশাসনিক বৈঠক, স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গেও রেফারের বিষয়টি তুলেছি।” জ্বর, সর্দি কিংবা দুর্ঘটনায় সামান্য মাথা ফাটলেও মেডিক্যালে রেফার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

চাঁচলে রয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এছাড়া ১৫টি গ্রামীণ হাসপাতাল, একাধিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। গ্রামীণ হাসপাতালের পাশাপাশি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকেও রোগী রেফার হয়ে আসছে মেডিক্যালে। গ্রামীণ হাসপাতালগুলির চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, হাসপাতালগুলিতে ভবন সংস্কার করা হয়েছে। তবে পরিকাঠামোগত সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তাই ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের হাসপাতালে রাখতে চান না অনেকেই।

এক চিকিৎসক বললেন, “রোগীর আত্মীয়দের খুব চাপ থাকে। তাঁদের কথা না মানলে ঘেরাও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। অনেক সময় মারধরও খেতে হয়।” মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈয়দ শাহজাহান নিজাম বলেন, “গ্রামীণ হাসপাতালেও সন্তান প্রসব থেকে অন্য চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এমনকী, গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতেও পরিকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Medical College Hospital Refer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE