বিলি: বাগান কর্মীদের সচেতনতার লক্ষ্যে প্রশাসন। —নিজস্ব চিত্র।
স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কথা বলতেই কুঁকড়ে যান সাবিত্রী মুন্ডা, দিব্যা মুন্ডা, প্রশান্তি পান্নারা। পাঁচ জনের সামনে এ কথা নিয়ে আলোচনায় বেশ একটু জড়তাই বোধ করছিলেন। ‘প্যাডম্যান’ সিনেমা নিয়ে কোথায়, কী হইচই হচ্ছে তা জানা নেই। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা দূরে থাক নামও শোনেননি তাঁদের অধিকাংশই। তা দিয়ে কী হবে, তাও জানেন না ওঁরা। তবে বৃহস্পতিবার সেই লজ্জা, সঙ্কোচকে দূরে সরিয়ে মোরিয়ামবাড়ি টি এস্টেটের কমিউনিটি হলে কার্শিয়াং মহকুমাশাসকের দফতরের তরফে তাঁদের স্বাস্থ্য সচেতনতার অায়োজন হল। পাশে ছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পাশাপাশি মহিলাদের নিখরচায় স্যানিটারি ন্যাপকিনও বিলি করা হল।
মহকুমাশাসক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়, বিডিও নীলাঞ্জন মণ্ডল, দফতরের মহিলা আধিকারিক লিনচেন শেরপা, সংহিতা তলাপাত্ররা এ দিন মঞ্চ থেকে ওই মহিলাদের সামনে স্যানিটরি ন্যাপকিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘এটা লজ্জা পাওয়ার কোনও ব্যাপার নয়। এর সঙ্গে সমস্ত বয়সের মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা জড়িয়ে। ঋতুকালীন অবস্থার কথা লুকিয়ে রাখলে চলবে না। পরিষ্কার স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে, কাপড় থেকে নানা রোগ সংক্রমণ ঘটে। তাই এই প্যাড ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে।’’
এ দিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে প্রশাসনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী মোরিয়ামবাড়ির ১০১ জন এবং গিড্ডা পাহাড়ের ৬০ জনকে ছ’মাস ব্যবহারের জন্য স্যানিটারি প্যাড দেওয়া হয়। সংস্থার সম্পাদক অম্লান বিশ্বাস জানান, তাঁরা সমীক্ষা করে দেখেছেন সচেতনতার অভাবে আদিবাসী, দুঃস্থ পরিবারের মহিলারা ঋতু চলাকালীন ন্যাপকিনের বদলে কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করেন। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এর জন্য গিদ্দাপাহাড় এলাকায় মহিলারা অনেকে ‘প্যাপিলিয়াম ভাইরাস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তা ছাড়া এর থেকে সারভাইক্যাল ক্যানসার, ত্বকে, ‘রিপ্রডাক্টিভ ট্র্যাক’-এ সংক্রমণ ঘটে। চা বাগান এলাকার গরিব পরিবারের মহিলাদের সচেতনতার বিশেষ অভাব রয়েছে। সংস্থা দার্জিলিং, ডুয়ার্স এলাকায় জুন মাসের মধ্যে ৩৫ হাজার মেয়ে, মহিলাকে এই স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলির লক্ষ্য নিয়েছেন।
বিষয়টি জানার পরে মহিলারা অনেকেই সঙ্কোচ কাটিয়ে বলেছেন এটা তো ভাল ব্যাপার। দিব্যা বলেন, ‘‘এই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কথা এত দিন জানা ছিল না। তবে এ বার ব্যবহার করব।’’ সাবিত্রী মুন্ডা, মরিয়াম গুড়িয়াদের কথায়, ‘‘চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতে হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ন্যাপকিন কেনার টাকা খরচ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে জানানো হয়, সে কারণেই এ দিন নিখরচায় তাঁরা স্যানিটরি ন্যাপকিন দিয়েছেন এবং ছ’মাস অন্তর এ ভাবেই দিয়ে যাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy