Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্ক্রাব টাইফাসই, মৃত আর এক ভাই

জলপাইগুড়ি খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মোত্তরপাড়ায় একই পরিবারের দুই খুড়তুতো ভাই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের। ২৪ ডিসেম্বর মৃত্যু হয়েছিল প্রদীপ ওরফে উত্তম দামের। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয়েছে দোলন ওরফে লক্ষ্মী দামের (২৮)।

শোকাহত: পরিবারে দু’জনের মৃত্যুর পর কান্নায় ভাঙে পড়েন এক পরিজন। ছবি: সন্দীপ পাল

শোকাহত: পরিবারে দু’জনের মৃত্যুর পর কান্নায় ভাঙে পড়েন এক পরিজন। ছবি: সন্দীপ পাল

অর্জুন ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে আগেই মৃত্যু হয়েছিল পরিবারের এক ভাইয়ের। এবার মারা গেলেন তাঁর খুড়তুতো ভাইও।

জলপাইগুড়ি খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মোত্তরপাড়ায় একই পরিবারের দুই খুড়তুতো ভাই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের। ২৪ ডিসেম্বর মৃত্যু হয়েছিল প্রদীপ ওরফে উত্তম দামের। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয়েছে দোলন ওরফে লক্ষ্মী দামের (২৮)। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকেরা মুখে স্ক্রাব টাইফাসকে মৃত্যুর জন্য দায়ী করলেও লিখিত ভাবে তা জানাতে রাজি হননি।

তবে চিকিৎসকদের অভিমত, স্ক্রাব টাইফাস চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। এই রোগের শেষ পরিণতি ‘সেপ্টিসেমিয়া’। শুরুতেই রোগ চিহ্নিত করা না গেলে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আর এই দুই ভাইয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে।

জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মোত্তরপাড়া গ্রাম জুড়ে কিছুদিন ধরে স্ক্রাব টাইফাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্র চারদিনের ব্যবধানে একই পরিবারের দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত পড়শিরা। মৃতের দাদা দীপক দাম বলেন, ‘‘গ্রামের বাসিন্দাদের ধারণা হয়েছে যে, রোগটা ছোঁয়াচে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের বাড়িতে আসছেন না গ্রামের বাসিন্দারা।’’ স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্ণু বাড়ুই বলেন, ‘‘একই বাড়িতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বভাবতই আমাদের মধ্যে আতঙ্ক গ্রাস করছে। ফলে ওই বাড়িতে যেতেও ভয় হচ্ছে।’’

সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বিকাশ রায় বলেন, ‘‘গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’ মৃতের পরিবারের লোকেরা রবিবার জানান, উত্তম ও লক্ষ্মী দুই ভাই একসঙ্গেই থাকতেন। ১৫ ডিসেম্বর লক্ষ্মী লাটাগুড়ির জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে আসার পর তাঁর বাঁ পায়ের উরুর কাছে প্রথমে ফোড়ার মতো গুটি দেখা গিয়েছিল দুই ভাইয়ের। বাড়ির লোকেরা জানান, এরপর অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন তারা। বমি হয়। জ্বর আসে। প্রথমে দু’জনকেই জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরিবারের লোকজন আরও জানান, ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে বেড ফাঁকা না থাকায় শিলিগুড়ির এক নার্সিংহোমে তাঁদের ভর্তি করানো হয়। ওখানেই ২৪ ডিসেম্বর উত্তমের মৃত্যু হয় এবং রবিবার সকালে লক্ষ্মীর মৃত্যু হয়।

জলপাইগুড়ির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রুদ্রকুমার ঈশ্বরারী জানান, স্ক্রাব টাইফাসেই মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scrub Typhus Fever Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE