ইটাহার থানায় বিস্ফোরণের পরে তছনছ ঘর। ভেঙে পড়ে রয়েছে কাচ। —নিজস্ব চিত্র।
থানার তদন্তকারী অফিসারদের ঘরেই ফেটে গেল উদ্ধার করে আনা বোমা। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানায় রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ ওই বিস্ফোরণে জখম হলেন সাব ইন্সপেক্টর পরাণ মণ্ডল, সহকারী সাব ইন্সপেক্টর দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও সিভিক ভলান্টিয়ার মনিরুল ইসলাম। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা পরাণবাবুকে কলকাতায় রেফার করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি মনিরুল ইসলাম।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনও এলাকা থেকে বোমা উদ্ধার হলে সঙ্গে সঙ্গে তা জলে ডুবিয়ে প্রাথমিকভাবে নিস্ক্রিয় করার কথা। তার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আদালতের অনুমতি নিয়ে সিআইডি বা বোম স্কোয়াডের উপস্থিতিতে সেগুলি নষ্ট করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে, ইটাহার থানায় কেন তাজা বোমা রাখা হয়েছিল, সে প্রশ্ন উঠেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। কোনও পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এর আগেও পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিস্ফোরক নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরাণবাবু প্রায় তিন বছর ইটাহার থানায় কর্মরত থাকার পর মাস দেড়েক আগে রায়গঞ্জ মহকুমার বিশেষ তদন্তকারী পুলিশ দলের ওসি-র দায়িত্ব নেন। ইটাহার থানার ডিউটি অফিসাররা যেখানে বসেন, তার পাশের ঘরটি তদন্তকারী অফিসারদের ঘর। এদিন যখন ওই ঘরে বিস্ফোরণ হয়, তখন পাশের ডিউটি অফিসারদের ঘরে একজন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর সহ চার পুলিশকর্মী কাজ করছিলেন। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা থানা। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারিদিক। পুলিশকর্মীরা দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যান। তছনছ হয়ে যায় ঘর। নথিপত্র যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। দীপঙ্করবাবুর পায়ে চোট লাগে। বাকি দু’জনের হাতে, পায়ে, পেটে, পিঠে, কানে ও চোখে বোমার টুকরো ঢুকে গিয়েছে।
ইটাহার থানায় বোমা ফেটে জখম পুলিশকর্মী পরাণ মণ্ডল।
রবিবার। ছবি: বিবেকানন্দ সরকার।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৬ মে জামালপুরের বাসিন্দা এক দুষ্কৃতীর বাড়ি থেকে একটি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সময় পরাণবাবুই ওই মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। পুলিশ ওই দিন জলভর্তি একটি প্লাস্টিকের বালতিতে ডুবিয়ে বোমাটি থানায় নিয়ে আসে। বোমা সহ সেই বালতিটি থানার মহিলা লকআপের পাশের একটি ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়। সেখানেই ছিল নানা সময়ে উদ্ধার করে আনা বেআইনি গ্যাস সিলিন্ডার, একাধিক ড্রাম বোঝাই কেরোসিন তেল সহ নানা দাহ্য পদার্থও। এ দিন পরাণবাবু তাঁর অধীনে থাকা বিভিন্ন মামলার রিপোর্ট তৈরির জন্য থানায় যান।
পুলিশের একাংশের দাবি, যে বালতিতে ওই বোমাটি রাখা ছিল, সেটি দীর্ঘদিন খোলা জায়গায় ফেলে রাখায় তার জল শুকিয়ে গিয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ, এ দিন পরাণবাবু জামালপুরের বোমা উদ্ধারের সেই মামলার অগ্রগতির রিপোর্ট তৈরির জন্য কোনও সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে বোমাটি ঘরে আনিয়ে নেন। বোমাটি রাখা হয়েছিল পরাণবাবুর চেয়ারের পাশে একটি আলমারি ও ঘরের দেওয়ালের মাঝখানে। তখনই বোমাটি কোনও কারণে ফেটে যায়। কেউ সেটা হাতে তুলে নাড়াচাড়া করছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এরপরে জেলা পুলিশের কর্তারা পৌঁছনোর আগেই মহিলা লকআপের পাশের ওই ফাঁকা জায়গায় থাকা গ্যাস সিলিন্ডার ও কেরোসিন তেল সরিয়ে ফেলা হয়। যে বালতিটিতে বোমাটি রাখা হয়েছিল, তারও কোনও হদিস মেলেনি। যে ঘরে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি তড়িঘড়ি তালা দিয়ে পুলিশ কর্তাদের ছাড়া অন্য কারো ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেয় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy