Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আশা পূরণ হল না, প্রার্থী নিয়ে কোন্দলেই বিপর্যস্ত বিজেপি

লোকসভা ভোটে ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে এগিয়েছিল বিজেপি। কর্মী সমর্থকদের একাংশ আশা করেছিলেন, অনেক ওয়ার্ডেই এ বার তাদের জয় হবে। মঙ্গলবার ভোটের ফল যখন প্রকাশ হলে দেখা গেল সাকুল্যে তাদের জয় হয়েছে ২টি ওয়ার্ডে। এর পরেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন এমন ফল হল তদন্ত করে সে ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪২
Share: Save:

লোকসভা ভোটে ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে এগিয়েছিল বিজেপি। কর্মী সমর্থকদের একাংশ আশা করেছিলেন, অনেক ওয়ার্ডেই এ বার তাদের জয় হবে। মঙ্গলবার ভোটের ফল যখন প্রকাশ হলে দেখা গেল সাকুল্যে তাদের জয় হয়েছে ২টি ওয়ার্ডে। এর পরেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন এমন ফল হল তদন্ত করে সে ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে। কারণ, প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে যে কোন্দল শুরু হয়েছিল, সেটাই কাল হল বলে মনে করছেন বিজেপি-র কর্মী সমর্থকদের একাংশ। দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে টিকিট পাইয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল, বাসিন্দারা সেটাও ভাল চোখে দেখেননি বলে দলের কর্মীদের একাংশ মনে করছেন।

দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। ফলাফল বিশ্লেষণ করছি। তার পরেই দলের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’

প্রচারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের ফল তুলে ধরে পুরনির্বাচনে ভাল ফলের দাবি করেছিল বিজেপি। এমনকী তারা শিলিগুড়িতে পুরবোর্ড গড়বে বলে দাবিও করেছিল। অথচ এ দিন নাম মাত্র দু’টি আসনে জয়ের পর ‘লোকসভা’ ভোটের ফল এবং পুরভোটের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা বলে দায় এড়াতে চাইছেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১ নম্বর এবং ৮ নম্বর এই দুটি ওয়ার্ডে এ দিন জিতেছে বিজেপি। অতীতের তুলনা টেনে এই ফলকে আপেক্ষাকৃত ভাল বলে মুখ রক্ষার চেষ্টা করলেও প্রত্যাশার ১৫ আনাই যে পূরণ হয়নি, বলে মনে করেন কর্মী-সমর্থকেরা।

এ দিন জেলা বিজেপি নেতৃত্বকে বলতে শোনা গিয়েছে, লোকসভা ভোট আলাদা প্রেক্ষাপটে হয়েছিল। সেখানে নরেন্দ্র মোদীকে চেয়েছিল দেশ। শিলিগুড়িতে বিজেপি-র সংগঠন না থাকলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভাল ভোট পেয়ে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে তাদের প্রার্থীকে এগিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তৃণমূলও কিছুটা উদ্বেগে ছিল পুরভোটে বিজেপি-র ওই ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে। কিন্তু দুটি ছাড়া বাকি ওয়ার্ডে সেই ফল ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। প্রার্থী নিবার্চন নিয়েই গোলমাল শুরু হয় দলের অন্দরে।

বিজেপি-র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের নিরিখে বিচার করলে চলবে না। কেননা, সেখানে ব্যাপারটাই আলাদা ছিল। তখন সংগঠন না থাকলেও মোদীকে দেখে মানুষ ভোট দিয়েছে। আর এখন যে ভোট আমরা পেয়েছি, তা সাংগঠনিক শক্তির উপর ভিত্তি করে। সে দিক দিয়ে বিচার করলে আমাদের ফল ভাল হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, গত পুরনির্বাচনে বিজেপি ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সব ক্ষেত্রেই বিজেপি-র প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে। অথচ এ বার তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কোথাও ২০ শতাংশ, কোথাও তার চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছেন বলে কৃতিত্বের দাবি করতে চাইছেন।

বাস্তবে, লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি-র উত্থান বিরোধীদলগুলির মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। গত বার যেখানে তারা চার-পাঁচটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পেরেছিলেন, এ বার সেখানে সব ওয়ার্ডেই প্রার্থী দেন। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে পুর এলাকায় দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল বিজেপি। সেখান থেকে তারা চতুর্থ স্থানে সরে এল। শিলিগুড়িতে দলের এই ফলের জন্য নেতৃত্বের একাংশকেই দায়ী করেছেন নিচু তলার কর্মী–সমর্থকদের অনেকে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু-সহ অন্য নেতাদের অনেককেই। টাকার বিনিময়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। জেলা সভাপতির বাড়ি ঘেরাও করেও রাখা হয়েছিল। এমনকী রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের একাংশের দিকেও আঙুল ওঠে। সাংবাদিক বৈঠক করে ওই নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন বিজেপি-র ওই নেতারা।

অন্তত ৭টি ওয়ার্ডে বিজেপি-র প্রার্থীর অন্যতম দাবিদার হলেও অনেককে অন্যায় ভাবে টিকিট না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অনেকে নির্দল হিসাবে দাঁড়াতে চান। দলের মধ্যে এই কোন্দল নিয়ে জনমানসেও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। লোকসভা ভোটে যেখানে ১-৫, ৭-১১, ১৩, ২৫-২৬, ৩২, ৩৬,৩৭, ৪০, ৪১ ৪৩, ৪৫, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে লোকসভা ভোটে প্রথম স্থানে ছিল। এই পুর নিবার্চনের সে সব অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোথাও তৃতীয় কোথাও চতুর্থ স্থান পেয়েছে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE