Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ধৃত যুবক

ফেসবুকে পরিচয়, তরুণীর যৌন হেনস্থা

সোশ্যাল মি়ডিয়াকে কাজে লাগিয়ে তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ত এক যুবক। আর তার পরেই সেই তরুণীর ছবিকে নগ্ন মেয়েদের ছবির সঙ্গে সুপারইম্পোজ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাত সে। এই ব্ল্যাকমেলিং-এর ফাঁদে পড়ে যৌন হেনস্থার শিকার হতেন ওই সব তরুণীরা। সম্প্রতি এক তরুণীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই যুবককে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি পুলিশ। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ধৃতকে জেরা করে এমনই ঘটনার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

সোশ্যাল মি়ডিয়াকে কাজে লাগিয়ে তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ত এক যুবক। আর তার পরেই সেই তরুণীর ছবিকে নগ্ন মেয়েদের ছবির সঙ্গে সুপারইম্পোজ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাত সে। এই ব্ল্যাকমেলিং-এর ফাঁদে পড়ে যৌন হেনস্থার শিকার হতেন ওই সব তরুণীরা। সম্প্রতি এক তরুণীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই যুবককে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি পুলিশ। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ধৃতকে জেরা করে এমনই ঘটনার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা শনিবার বলেন, ‘‘ধৃত যুবককে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে বেশ কিছু তরুণী, মহিলার ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে। সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমেই অভিযোগকারী তরুণীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’’

শিলিগুড়ির সাইবার থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে অর্ক মিত্র নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃতের বাড়ি অরবিন্দপল্লি এলাকায়। অভিযুক্ত যুবক বি.টেক পাশ করে শিলিগুড়িতেই একটি গাড়ির কোম্পানিতে চাকরিরত। নির্যাতিতা তরুণীর মাধ্যমেই ওই যুবককে এক জায়গায় ডেকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওই যুবকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা, শ্লীলতাহানি, জোর করে বিবস্ত্র করা, ধর্ষণ এবং সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিশ ধৃত যুবকের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে আরও কয়েক জন তরুণী-মহিলার নগ্ন ছবি উদ্ধার করেছে। ওই সমস্ত মহিলা-তরুণীরাও ওই যুবকের খপ্পরে পড়েছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। গত বুধবার থেকে ধৃত যুবক পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত গত নভেম্বর মাসে। ফেসবুকে প্রথম বন্ধুত্বের আবেদন করেছিল ওই যুবকই। কলেজ ছাত্রী তাতে সাড়া দেয়। তখনও সাধারণ কথা বার্তা চলত ফেসবুকে। অভিযোগ, পরে দেখা করার প্রস্তাব দেয় যুবক। দু’জনের দেখাও হয়। এর পরেই এক দিন তরুণীর ফেসবুকের ফটো অ্যালবামের ছবিগুলিকে বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে নগ্ন মেয়েদের ছবির সঙ্গে সুপারইম্পোজ করে যুবক তাকে দেখায় বলে পুলিশকে জানিয়েছে ওই তরুণী। সেই থেকেই তরুণীকে নানা ভাবে চাপ দেওয়া শুরু হয় বলে অভিযোগ। তরুণীর কাছে যুবক তাঁর কিছু নগ্ন ছবি চেয়ে জোর করতে থাকে। চাপে পড়ে তরুণী সে ধরনের ছবি তাকে দিয়ে দেন বলে তাঁর দাবি। বিপদে পড়ে তরুণী ফেসবুক থেকে যুবককে ‘আনফ্রেন্ড’ করে দেন। ফোনেও যুবকের নম্বর ‘ব্লক’ করে দেন। তাতেও পিছু ছাড়েনি যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, ফের যোগাযোগ করে তরুণীকে যুবক তার বাড়িতেও নিয়ে যায়। তরুণীকে অভিযুক্ত ধর্ষণ করে বলেও অভিযোগ করা হয়। ক্রমশই তাঁকে নানা ভাবে যৌন হেনস্থার স্বীকার হতে হচ্ছে দেখে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না ওই কলেজ ছাত্রী। বাড়ির লোককেও জানাতে সাহস পাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত তরুণী বুধবার পুলিশে অভিযোগ জানান। পরে পুলিশের পরামর্শে বাড়ির লোককে জানিয়েছেন।

এ ধরনের ঘটনার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান রাজীব প্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে মেয়েদের। ফেসবুকে বিভিন্ন ফটো দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। এ ধরনের বিপদে পড়লে অভিভাবকদের জানানো উচিত। অচেনা লোকের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব না করাই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE