জেলায় শিশুকল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি) না থাকার জেরে ফের চূড়ান্ত হয়রানির মধ্যে পড়তে হল ছয় নাবালিকাকে। যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়ার পর নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে ২৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরতে হল তাদের। বুধবার দুপুর থেকে রাতভর পুলিশভ্যানে চাপিয়ে অন্তত ৪৫০ কিলোমিটার ঘুরিয়ে অন্য জেলার শিশুকল্যাণ সমিতিতে নিয়ে যাওয়া হয় নাবালিকাদের। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আদালতে জবানবন্দি নথিভুক্ত করাতে বসিয়ে রাখা হয় তাদের। সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয় হোমে।
বুধবার উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ার যৌনপল্লি থেকে ছয় নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ। নিয়ম অনুযায়ী নাবালক বা নাবালিকা উদ্ধারের পরে সংশ্লিষ্ট জেলার শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে নিয়ে যেতে হয়। উত্তর দিনাজপুর জেলায় সেই সমিতি নেই। সে জেলার দায়িত্বে সামলাতে হয় জলপাইগুড়ি জেলার সমিতিকে। তাই নাবালিকাদের উদ্ধারের নথি তৈরি করে বিকেল ৫টা নাগাদ ভ্যানে চাপিয়ে জলপাইগুড়ি রওনা করা হয় নাবালিকাদের। এবং রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ জলপাইগুড়ি শহরের পান্ডাপাড়ায় সমিতির সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্যের অফিসে পেশ করা হয় তাদের। সুবোধবাবু নাবালিকাদের রায়গঞ্জের হোমে রাখার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পেয়ে পুলিশভ্যান ফের রায়গঞ্জের দিকে রওনা দেয়। ভ্যানটি ইসলামপুরে পৌঁছয় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ।
তারপরও অবশ্য নাবালিকাদের হোমে নিয়ে যাওয়া যায়নি। সমিতি নাবালিকাদের জবানবন্দি আদালতে নথিবদ্ধ করানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সে কাজ দ্রুত ‘সেরে’ ফেলার তাগিদে নাবালিকাদের ইসলামপুর আদালতেই বসিয়ে রাখা হয়। জবানবন্দি নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের রায়গঞ্জের হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। নাবালিকাদের এই হয়রানি নিয়ে রাজ্য শিশুসুরক্ষা কমিশনের এক সদস্য বলেন, ‘‘চূড়ান্ত অমানবিক! এই দীর্ঘ সময় যন্ত্রণা সহ্য করতে হল নাবালিকাদের! যৌনপল্লিতে নির্ঘাত অত্যাচার হয়েছে! তার পরে এই নিয়মের ধকল সহ্য করা!’’
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “আমাদের জেলায় সমিতি না থাকায় শিশুদের জলপাইগুড়ি পাঠাতে হয়। এটাই নিয়ম। নাবালিকাদেরই নয়, পুলিশকর্মীদেরও ধকল হয়েছে।” এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রশ্ন, রাতভর টানাটানি না করে জলপাইগুড়ির সমিতির সদস্যদের ডেকে পাঠানো হল না কেন বা রাতে জলপাইগুড়ির কোনও হোমে রাখা হল না কেন? এ বিষয়ে জলপাইগুড়ির সমিতির সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যে জেলা থেকে শিশু উদ্ধার হয়, সেই জেলার আদালতেই জবানবন্দি নথিবদ্ধ করতে হয়। তাই রায়গঞ্জে পাঠাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy