আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় উত্তরবঙ্গের সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকায় চায়ের উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। তবে জলসেচ, পরিচর্যার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকায় অনেক বড় বাগান তা সামলে উঠতে পেরেছে। ক্ষুদ্র চা চাষিরা অনেকেই প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে পারেননি। ফলে, ক্ষুদ্র চাষিদেরই উৎপাদন গড়ে ৩০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু, চা পাতার গুণগত মান ভাল করতে পারায় ক্ষুদ্র চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি।
তাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে নর্থ বেঙ্গল স্মল টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিস্টা)। সিস্টার সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জুন-জুলাইয়ে প্রতীক্ষিত আবহাওয়া পাওয়া যায়নি বলে উৎপাদন কম হয়েছে। কিন্তু, চা পাতার গুণগত মান উন্নত হওয়ায় কেজি প্রতি ১৪, ১৫ টাকা মিলছে। তাই কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছি।’’ ক্ষুদ্র চা চাষিদের তরফে টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (টিআরএ) সহযোগিতায় চা পাতার গুণগত মান বাড়ানো গিয়েছে বলে মানছেন অনেকেই।
সিস্টা ও এনবিএসটিপিএ সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গে খাতায়-কলমে ২৬ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি রয়েছেন। নথিভুক্ত না থাকা ক্ষুদ্র চা চাষিদের ধরলে সেই সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তাঁরা বার্ষিক উৎপাদন ৩৮৫ মিলিয়ন কেজির মধ্যে ৩০ শতাংশ যোগান দেন বলে সিস্টার দাবি। অতীতে ছোট চা চাষিরা চা পাতার দাম পেতেন না বলে অনেকেই বাগান বন্ধ করে দিচ্ছিলেন। চা পর্ষদের পক্ষ থেকে কাঁচা পাতার ন্যূনতম দর বেঁধে দেওয়া শুরু হয়। তাতে সমস্যা কিছুটা মেটে।
এতদসত্ত্বেও গত জুনে প্রবল দাবদাহে লাল মাকড়সার উপদ্রবে উত্তরবঙ্গের সমতলে চা বাগানে পাতার ক্ষতি হয়। সাধারণত, জুনের মাঝামাঝি বর্ষা শুরু হয়। এ বার আগেই কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়। পরে টানা দাবদাহ চলে। জুলাই মাসেও টানা বৃষ্টি নেই। বরং, তৃতীয় সপ্তাহ অবধি তাপমাত্রা ৩৫-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। তাতে নানা ধরনের পোকামাকডের উপদ্রব বেড়ে যায়। ক্ষতির আশঙ্কায় চা চাষিদের অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন।
কিন্তু, চা পাতার গুণমান ভাল হওয়ায় বটলিফ কারখানাগুলি পর্ষদের বেঁধে দেওয়া দরে কিনতে শুরু করে। দার্জিলিঙের সমতলে কেজি প্রতি কাঁচা পাতা ১৩ টাকা ৫৫, জলপাইগুড়িতে ১৪ টাকা ৯২, উত্তর দিনাজপুরে ১৩ টাকা ৪৫, কোচবিহারে ১৫ টাকা ৬৯ পয়সা দরে বিক্রি করতে পারছেন ক্ষুদ্র চাষিরা। এনবিএসটিসি-এর কার্যকরী সমিতির সদস্য তথা ছোট চা বাগানের মালিক রণজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘টিআরএ-র প্রশিক্ষণে অনেক লাভ হয়েছে।’’ টিআরএ-র উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটার শাখার অন্যতম উপদেষ্টা সৌমেন বৈশ্য বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র চাষিরাও মান ভাল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, এটা সুলক্ষণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy