Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Lost son

চার বছর পরে ফিরল কিশোর

সমিতির চেয়ারম্যান অসীম রায় ও হোমের অধ্যক্ষ সুব্রত দাস বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর মুখে আমরা ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি। কৃষ্ণের বাবা-মা চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের তিন মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে কৃষ্ণ। তার মা জানান, ২০১৪ সালের ৪ জুলাই সকালে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির সামনের মাঠে খেলতে গিয়েছিল কৃষ্ণ। তার পরেই সে নিখোঁজ হয়ে যায়।

মা-বাবার সঙ্গে কৃষ্ণ। নিজস্ব চিত্র

মা-বাবার সঙ্গে কৃষ্ণ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:৪৯
Share: Save:

বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। হারিয়ে গিয়েছিল কার্শিয়াংয়ের লংভিট টি এস্টেট এলাকার কিশোর কৃষ্ণ বল। কিন্তু বলতে পারে না, শুনতেও পায় না সে। তাই বাড়ির ঠিকানা বলতে বা লিখে বোঝাতে পারেনি সে। ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়েছিল উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে। পুলিশের চেষ্টায় শেষপর্যন্ত কৃষ্ণের ছাঁই হয়েছিল রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ার সরকারি সূর্যোদয় মূক ও বধির হোমে। সেটা ২০১৪ সালের জুলাইয়ের কথা।

চার বছরেরও বেশি সময় পর ১৬ বছরের সেই কিশোরকে বৃহস্পতিবার তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিল উত্তর দিনাজপুর জেলা শিশুকল্যাণ সমিতি। এতদিন কৃষ্ণ হোম কর্তৃপক্ষকে ইশারায় বা কাগজে লিখে নিজের নাম ও তার বাড়ির ঠিকানা জানাতে পারেনি। এ দিন ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরেন বাবা ইরান ও মা প্রণিতা বল। দু’জনেই কেঁদে ফেলেন। এ দিনই দার্জিলিং পুলিশের মিসিং পার্সন ব্যুরোর ইনস্পেক্টর ধীরেন্দ্রনাথ বাগ ওই হোম থেকে কৃষ্ণ, তার বাবা ও মাকে পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে তাঁদের কার্শিয়াংয়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।

সমিতির চেয়ারম্যান অসীম রায় ও হোমের অধ্যক্ষ সুব্রত দাস বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর মুখে আমরা ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি। কৃষ্ণের বাবা-মা চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের তিন মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে কৃষ্ণ। তার মা জানান, ২০১৪ সালের ৪ জুলাই সকালে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির সামনের মাঠে খেলতে গিয়েছিল কৃষ্ণ। তার পরেই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। কৃষ্ণ পড়াশোনা করত না। ওইদিন তাঁরা বহু খোজাখুঁজি করেও ছেলের হদিশ না পেয়ে পরদিন পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু খোঁজ মেলেনি তার। সমিতির চেয়ারম্যান অসীমের দাবি, ৪ জুলাই রাতেই করণদিঘি থানার পুলিশ কৃষ্ণকে টুঙ্গিদিঘি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাকে উদ্ধার করে। এরপর সমিতির মাধ্যমে তাকে ওই হোমে রাখা হয়। অসীমের বক্তব্য, মূক ও বধির বলে ও কীভাবে টুঙ্গিদিঘিতে চলে এসেছিল তা জানাতে পারেনি। হোম কর্তৃপক্ষ ও সমিতির সদস্যরা গত চার বছরে বহু চেষ্টা করলেও কৃষ্ণ ইশারার মাধ্যমেও নিজের নাম-ঠিকানা জানাতে পারেনি। হোম কর্তৃপক্ষ তার নাম বিজয় পান্থ রেখেছিলেন।

ইরানের দাবি, খেলার সময়ে কোনও গাড়িতে উঠে পথ হারিয়ে কৃষ্ণ টুঙ্গিদিঘিতে পৌঁছে গিয়েছিল বলে তাঁদের সন্দেহ। হোমের অধ্যক্ষ সুব্রতের দাবি, কিছুদিন আগে দার্জিলিং পুলিশের মিসিং পার্সন ব্যুরোর তরফে দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন থানা এলাকার নিখোঁজ মূক ও বধির বাসিন্দাদের নাম, পরিচয় ও ছবি হোম ও সমিতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সমিতির সদস্যরা ছবি দেখে কৃষ্ণকে শনাক্ত করে ব্যুরোর অফিসারদের জানান। এর পরেই গত ৬ অক্টোবর ব্যুরোর অফিসাররা ইরান ও প্রণিতাকে ওই হোমে নিয়ে যান। সেখানেই টিআই প্যারেডের মাধ্যমে কৃষ্ণ তার বাবা-মাকে চিনতে পেরে তাঁদের কোলে উঠে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lost son TI Parade Family reunited
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE