Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পাখি পাচারে নজর উত্তরে

গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের (ডিআরআই) ধরপাকড়ে লাল, নীল ম্যাকাউ থেকে ইলেকটাস প্যারট, পিগমি ফ্যালকন বা কুকাবুরাস কাঠঠোখরার মত দুস্প্রাপ্য পাখি পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৫
Share: Save:

তাইল্যান্ড থেকে মায়ানমার, সেখান থেকে চোরাপথে সীমান্ত পার হয়ে এদেশের মিজোরাম। আর তারপরে সড়কপথে কলকাতা বা মুম্বই। তদন্তকারীদের সন্দেহ এই পথেই বিদেশি ও লুপ্তপ্রায় পাখি পাচারের একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।

গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের (ডিআরআই) ধরপাকড়ে লাল, নীল ম্যাকাউ থেকে ইলেকটাস প্যারট, পিগমি ফ্যালকন বা কুকাবুরাস কাঠঠোখরার মত দুস্প্রাপ্য পাখি পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারেরা জানাচ্ছেন, গত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একাধিক পাচারের চেষ্টা ধরার পরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ওই ক’দিনে অন্তত ৪৫০টি অত্যন্ত দামি পাখি, একাধিক পাচারকারীকে ধরা হয়। ধৃতরাই ওই রুটের বিষয়ে জানিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

ডিআরআই-র উত্তরবঙ্গের এক কর্তা জানান, হাতির দাঁত, চিতাবাঘের চামড়া, গন্ডারের শিং, সাপের বিষ, কচ্ছপ বা তক্ষক প্রায়শই ধরা পড়ে। সিকিম, কালিম্পং, দার্জিলিংয়ের উঁচু এলাকা থেকে প্রজাপতি পাচারের বিযয়টিও সামনে এসেছিল। এর পরেই রংবেরঙের পাখি পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। চক্রের সদস্যদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডিআরআই সূত্রে খবর, অনেকে ব্যক্তিগত সংগ্রহে এই ধরনের পাখি রাখে। পশু-পাখি ব্যবসায়ীদের কাছেও এই পাখি বিপুল দামে বিক্রি হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সার্কাস দলে এই পাখিগুলো বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ। পাখি আনা-নেওয়ার জন্য জাল কাগজপত্রও তৈরি হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গত অক্টোবরে বিমানের কার্গোতে লুকিয়ে এনে কলকাতা থেকে রঙিন পাখি পাচারের চেষ্টা ধরা পড়েছিল।

ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট-১৯৭২ আইনটি শুধু ভারতে বংশগতভাবে জন্ম নেওয়ার প্রাণীদের পাচার সংক্রান্ত ও নানা কারণে ব্যবহার হয়। বিদেশ থেকে এই পাখি আনতে গেল বন মন্ত্রক, পরিবেশ মন্ত্রক ও শুল্ক দফতরের ছাড়পত্র লাগে। যিনি পাখি আনছেন তাঁকে সমস্ত নথিপত্র জমা দিতে হয়।

গোয়েন্দা অফিসারদের কথায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাইসেন্সপ্রাপ্ত পশু-পাখি বিক্রেতা আছেন। তাঁরা খোলা বাজারে বিদেশ থেকে পাখি এনে বিক্রি করেন। সেখান থেকে ওই ধরনের বিদেশি পাখি কিনতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। উল্টে, চোরাবাজারে কম টাকা লাগে। তাঁরা জানান, বাজারে ম্যাকাউ থেকে ইলেকটাস প্যারট, পিগমি ফ্যালকনের এক এক জোড়া দাম ৫০ হাজার থেকে ২-৩ লক্ষ টাকা অবধি হয়। এ ছাড়া চোরা বাজারে জাভা স্প্যারো, স্টার ফিন্চেস, গোল্ডেন ফিন্সেচ, ককটাইলস, লিমুর্স, ক্যাসোওয়ারিস বা হোয়াইট ডাকের দাম হাজার হাজার টাকা।

বাড়ির সাজানো ছাদে, বাগানে, বারান্দায়, ফার্ম হাউস বা বাংলোতে বিদেশি পাখি রাখার চল বাড়তে থাকায় এই চোরাকারবার ফুলেফেঁপে উঠছে বলে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bird Trafficking Forest Department Duars Forest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE