Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কোচবিহার নিয়ে চিন্তা, বাড়তি নজর

কোন্দল মানেই যেন কোচবিহার! জেলায় দলের টানা কোন্দলে ‘বিরক্ত’ তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বও। তাই দলের কোন্দলে যাতে উন্নয়ন কাজে ভাঁটা না আসে তাই এ বার বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে দল সূত্রে খবর।  

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

কোন্দল মানেই যেন কোচবিহার! জেলায় দলের টানা কোন্দলে ‘বিরক্ত’ তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বও। তাই দলের কোন্দলে যাতে উন্নয়ন কাজে ভাঁটা না আসে তাই এ বার বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে দল সূত্রে খবর।

দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্যস্তর থেকে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি’রা নিয়মিত কোচবিহারের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। তেমনই, উন্নয়নের কাজকর্ম রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হাতে থাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের দফতরের পাশাপাশি মন্ত্রী গৌতম দেবে’র নেতৃত্বধীন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদকেও দেখভাল করতে বলা হয়েছে। তাতে জেলায় কোন প্রকল্পের কাজ কোথায় কেমন, কী অবস্থায় রয়েছে তা পর্যালোচনার নির্দেশ রয়েছে। গত মাসেই পর্ষদের বৈঠকে কোচবিহারের একাধিক প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মদনমোহন দিঘি ও লাগোয়া এলাকা ফোয়ারা, এলএইডি স্ক্রিন, ফুটওয়ে তৈরির কাজ। রয়েছে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন, ক্লাসঘর তৈরি, মাথাভাঙার বৈরাগি দিঘি সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের মতো কাজ। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের ভবনের কাজ ও কোচবিহার শহরের রাজার আমলের নকশায় পথবাতি বসানোর কাজ ঢিমেতালে হওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আজ, সোমবার দুপুরে উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে উত্তরবঙ্গের আট জেলার বিভিন্ন কাজকর্ম ছাড়াও কোচবিহারের কাজকর্মও পর্যালোচনা করা হতে পারে। গৌতমবাবু দলের অন্দরের কাজকর্মের জন্য তৈরি উত্তরবঙ্গের কো-অর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়কও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘জেলায় কোনও কাজ ঢিমেতালে চলছে না। ২০১২ থেকে শুরু করে এখনও অবধি কাজের ৮৩ শতাংশই হয়ে গিয়েছে। দল দলের মতো, প্রশাসন প্রশাসনের মতো চলবে।’’

দলের নেতাদের একাংশই জানাচ্ছেন, কোচবিহারের তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গিয়েছে। একদিকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, সিতাই-এর বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া, হিতেন বর্মন এবং জলিল আহমেদরা আছেন। অন্য গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। গোষ্ঠী লড়াইয়ে তাঁর দিকেই ঝুঁকেছেন মিহির গোস্বামী, উদয়ন গুহরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে প্রার্থী বাছাই করা নিয়ে, তার পরে দায়িত্বে বসা নিয়ে টানা গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। রয়েছে মূল তৃণমূলের সঙ্গে যুব তৃণমূলের লড়াইও। দিনহাটা জুড়ে গোলমাল রোজকার ঘটনা হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কোচবিহার সফরে এসে তা নিয়ে ক্ষোভ জানান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

শাসক দলের নেতৃত্ব মনে করছেন, এই গোলমালের প্রভাব পড়ছে সরাসরি উন্নয়নের কাজে। অনেক প্রকল্পই ঢিমেতালে চলছে বলে অভিযোগ। তাই দল চাইছে, পার্টির অন্দরের সমস্যা দলীয়ভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি উন্নয়নের কাজে বাড়তি গুরুত্ব দিতে। তাই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজে আরও গতি আনার পক্ষপাতি নেতৃত্ব। ২৯ অক্টোবর কোচবিহারে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীকে রাসমেলায় আসতে অনুরোধও করেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের জানান, দুই মন্ত্রী গৌতম দেব এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মিলিয়েই এ বারের রাসমেলার বিষয়টি দেখবেন। দলের একাংশ মনে করছেন, জেলার বিভিন্ন নেতৃত্ব একযোগে মিলে উন্নয়নের ইঙ্গিত সেই সময়ই দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটনমন্ত্রী গৌতমবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে নিয়মিত আসেন। সমস্ত উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কাজের নির্দেশ, মতামত দেন। আগের সরকারের আমলে এ সব ভাবাই যেত না। কোচবিহার শুধু কেন, সব জেলার কাজ নিয়েই আমরা নিয়মিত পর্যালোচনা করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE