Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ ঝড়ে বিপর্যস্ত বিস্তীর্ণ এলাকা

ঘুর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখা, দুইয়ের টানে বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা জলীয় বাস্প ভরা ঝোড়া হাওয়ার দাপটে লন্ডভণ্ড উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গের ৬ জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও আগে, কোথাও পরে হলেও, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি থেকে বালুরঘাট, কোচবিহার, ইসলামপুর, আলিপুরদুয়ার সর্বত্রই ঝড় আছড়ে পড়েছে।

শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গের ৬ জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সকাল শুরু হয়েছে দুর্ভোগ দিয়ে। ময়নাগুড়িতে টিনের চাল উড়ে গিয়েছে।

শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গের ৬ জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সকাল শুরু হয়েছে দুর্ভোগ দিয়ে। ময়নাগুড়িতে টিনের চাল উড়ে গিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

ঘুর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখা, দুইয়ের টানে বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা জলীয় বাস্প ভরা ঝোড়া হাওয়ার দাপটে লন্ডভণ্ড উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গের ৬ জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও আগে, কোথাও পরে হলেও, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি থেকে বালুরঘাট, কোচবিহার, ইসলামপুর, আলিপুরদুয়ার সর্বত্রই ঝড় আছড়ে পড়েছে। কোথাও উপরে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, কোথাও বা গাছ পড়ে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির খবরও এসেছে বিভিন্ন জেলা থেকে। মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়েছে, উড়ে গিয়েছে টিনের চালও। তবে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বাসিন্দাদের।

শনিবার রাতে কয়েক দফায় ঝড় বয়ে গিয়েছে কোচবিহার জেলা জুড়ে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তুফানগঞ্জ, বক্সিরহাট, কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকায় চার শতাধিক কাঁচা বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোচবিহার শহরের তোর্সা বাঁধ লাগোয়া এলাকা, তুফানগঞ্জ ও বক্সিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে। অন্তত ১০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। তুফানগঞ্জ সহ কোচবিহার, দিনহাটা, মাথাভাঙার কিছু এলাকাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। তুফানগঞ্জের কিছু এলাকায় রবিবার দুপুরের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। ধান ও সব্জি খেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোচবিহারের সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া বলেন, “ঝড়ে বেশ কিছু বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে। বিস্তারিত খবর নেওয়া হচ্ছে।”


কোচবিহারে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।

কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের খাগরাবাড়ি, মহিষবাথান, রাজারহাট, পুন্ডিবাড়ি, মধুপুর, ঢাংঢিংগুড়ি, আমবাড়ি, খোলটা মরিচবাড়ি, পাতলাখাওয়া বাণেশ্বরের বিস্তীর্ণ এলাকা মিলিয়ে অন্তত ১১টি এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। একই রকমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা কামাখ্যাগুড়িতে।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় প্রায় ৫০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্বকাঠাল বাড়ি, পাতলাখাওয়া ও তপসিখাতা এলাকা প্রায় ১০০ বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। রবিবার সকালে আলিপুরদুয়ার শহরে বিদুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও, চেচাখাতা, আলিপুরদুয়ার জংশন, কামাখ্যাগুড়ি ও ফালাকাটাতে এ দিন দুপুর পর্যন্ত লোডশেডিং চলেছে। আলিপুরদুয়ার জংশনের রেল দফতরগুলিও বিদুৎহীন হয়ে রয়েছে। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, রাতে রেলের কন্ট্রোল রুম বেশ কিছু ক্ষণ বিদুৎহীন অবস্থায় ছিল। বিভিন্ন দফতরে জেনারেটার দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। ঝড়ের দাপটে শোভাগঞ্জ এলাকা সুভাষপল্লি স্টেটপ্ল্যান প্রাথমিক স্কুলের দোতালার টিনের চাল উড়ে যায়। আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসের সামনে বিশাল একটি গাছ ভেঙে পড়েছে। আলিপুরদুয়ার ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের সামনে গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে জেলার চাপরেরপাড় ২, টটপাড়া ১ ও ২, মহাকালগুড়ি এবং মাঝেরডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও। সলসলাবাড়ি বাজারে একটি দোকানের উপর গাছ ভেঙে পড়ে, তিন জন জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। একজনকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এলাকায় ৬০ বিঘা ভুট্টা, পাট, সুপারি, করলা, পটল ও কলা চাষে ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েকটি স্কুল বাড়ির চাল ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। অর্জুন গাছ পড়ে সলসলাবাড়িতে একটি দোকান ভেঙে পড়েছে। একাধিক বড় গাছ রাস্তার উপর উপরে পড়ায় এদিন রাত থেকে রবিবার সকাল ১১ পর্যন্ত সলসলাবাড়ি-আলিপুরদুয়ার ও ভাটিবাড়ি-আলিপুরদুয়ার রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।


আলিপুরদুয়ারে ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়ি রাস্তা।

শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঝড় শুরু হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের ব্লকে। বটুন, সমজিয়া, মোহনা ও জাকিরপুর গ্রামপঞ্চায়েতে একাংশ এলাকার ঘরবাড়ি ভেঙে, টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। মাটির দেওয়াল পড়ে বেশ কিছু গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ঝড়ের শুরু জলপাইগুড়িতেও। গাছ উপড়ে, ডাল ভেঙে তার ছিঁড়ে ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জলপাইগুড়ি-হলদিবাড়ি সড়কে গাছের ডাল ভেঙে রবিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। বালাপাড়া এলাকায় একটি স্কুলের চাল উড়ে গিয়েছে। ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং-২, শালবাড়ি, ঝাড়আলতা-১, গধেয়াকুঠি এলাকায় অন্তত ৫০টি কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নূরজাহান বেগম বলেন, “শনিবার রাতের ঝড়ে জেলার কিছু এলাকায় সামান্য কিছু ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির চিমনি। চিমনি পড়েছে শ্মশানচত্বরে থাকা একটি পাকা ঘরের উপরে। চুল্লিটির অন্য পাশে রয়েছে বস্তি এলাকা। সেদিকে পড়লে প্রাণহানিরী আশঙ্কাও ছিল বলে বাসিন্দাদের দাবি। রবিবার সকালেই পুরসভার বাস্তুকারদের নিয়ে ভাঙা চুল্লিটি দেখতে যান শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। ঘুরে দেখে দ্রুত মেরামতির নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক জায়গা ঘুরে দেখেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বলেছি মহকুমা প্রশাসনকে জানাতে। পুরসভার তরফেও প্রশাসনকে জানানো হবে।’’

আলিপুরদুয়ারে ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়ি রাস্তা।

শনিবার রাতের ঝড়ে শহরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পুরোনো গাছ পড়ে রাত থেকে রবিবার সারাদিন বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে ছিল। একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বরদাকান্ত স্কুলের সামনে একটি গাছ পড়ে ছিল রবিবার সারাদিন। বিকেল পর্যন্ত সেটি সরানো যায়নি। ঝড়ে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশবন্ধুপাড়া, সূর্য সেন কলোনি এলাকায়। শিলিগুড়ি লাগোয়া তিনবাত্তি, মাটিগাড়া, ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাডি, নকশালবাড়ি এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঝড়ে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওযা গিয়েছে। ঝড়ে হাসমিচকের একটি মেলার বিজ্ঞাপনের বিরাট হোর্ডিং ভেঙে পড়ে। যা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেয়র। তাঁর আশঙ্কা, ঘটনার সময়ে তার কেউ থাকলে প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারত। তিনি জানান, ‘‘শহর জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অস্থায়ী তোরণ রয়েছে, দু’দিনের মধ্যে সেগুলি খুলে ফেলতে বলা হয়েছে। পূর্ত দফতর তোরণের অনুমতি দেয়। তোরণ কতদিন থাকবে বা তার মান কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজন হলে আলাদাভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে যোগাযোগ করলে তা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে’’


ঝড়ে ছিঁড়ে গিয়েছে বড় বড় হোর্ডিংও। শিলিগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কয়েকদিন ধরেই দাবদাহের কারণে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছিল। একটি ঘূর্ণাবর্ত এবং মৌসুমী অক্ষরেখাও উত্তরবঙ্গে ছিল। দুইয়ের টানে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাস্প উত্তরবঙ্গে ঢুকতে শুরু করে। তার জেরেই ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Bengal Storm Alipurduar siliguri rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE