Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঝড়ের দাপটে তছনছ ধূপগুড়ি-ময়নাগুড়ি

দু’ঘণ্টার ঝড়। সঙ্গে প্রবল শিলাবৃষ্টি। তাতেই ধূপগুড়ি এবং ময়নাগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা পড়ল ক্ষয়ক্ষতির মুখে। ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কৃষকের। জখম হয়েছেন অন্তত ৬ জন। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটল, বেগুন, ঝিঙ্গে-সহ বিঘার পর বিঘা কপি খেত। প্রশাসন সূত্রের খবর, দু’টি ব্লকের ঝড় বিধ্বস্ত অন্তত ১৫টি গ্রামের শস্যহানি হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে অন্তত তিনশোটি বাড়ি।

(বাঁ দিকে) বৃষ্টিতে স্কুল থেকে ফেরা ময়নাগুড়িতে। (ডান দিকে) জলপাইগুড়িতে দুপুরেই যেন সন্ধে ঘনিয়েছে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক ও সন্দীপ পাল।

(বাঁ দিকে) বৃষ্টিতে স্কুল থেকে ফেরা ময়নাগুড়িতে। (ডান দিকে) জলপাইগুড়িতে দুপুরেই যেন সন্ধে ঘনিয়েছে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক ও সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

দু’ঘণ্টার ঝড়। সঙ্গে প্রবল শিলাবৃষ্টি। তাতেই ধূপগুড়ি এবং ময়নাগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা পড়ল ক্ষয়ক্ষতির মুখে। ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কৃষকের। জখম হয়েছেন অন্তত ৬ জন। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটল, বেগুন, ঝিঙ্গে-সহ বিঘার পর বিঘা কপি খেত। প্রশাসন সূত্রের খবর, দু’টি ব্লকের ঝড় বিধ্বস্ত অন্তত ১৫টি গ্রামের শস্যহানি হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে অন্তত তিনশোটি বাড়ি। গাছ উপড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ধূপগুড়ি এবং ময়নাগুড়ি শহরের। বিকেলের পরে ঝড় থেমে গেলেও, এ দিন রাত পর্যন্ত বৃষ্টি চলেছে।

ধূপগুড়ির বিডিও শুভঙ্কর রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির বেশ কিছু হিসেব হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাম থেকে ক্ষতির খবর আসছে।’’ ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপিকা ওঁরাও বলেন, ‘‘৭টি গ্রামের পরিস্থিতি তো খুবই খারাপ। সে সব এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশাসনকে সর্তক থাকার আর্জি জানানো হয়েছে।’’

এ দিন বিকেল থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। ঝোড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। একাধিক জায়গায় পুরো গাছও উপড়ে পড়েছে। পুলিশ জানিয়েছে ধূপগুড়ি শহরে গাছে চাপা পড়ে মৃত কৃষকের নাম অনিল রায় (৪২)। তিনি শহরের নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে রায়পাড়া এলাকার বাড়িতে ফেরার পথে ঝড়ের মুখে পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন। সে সময়েই একটি গাছ উপড়ে তাঁর উপরে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ধূপগুড়িতেই গাছ পড়ে জখম হয়েছেন আরও অন্তত ৬ জন। তাঁদের সকলকেই ধূপগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঝড়ে জখম আরও বেশ কয়েক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ প্রবল ঝড় আছড়ে পড়ে ধূপগুড়ি ও ময়নাগুড়িতে। আধঘণ্টা ধরে ঝড় চলার পরে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। কিছুক্ষণ পরে ফের আরেক প্রস্থ ঝড় শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রায় দু’ঘণ্টা কয়েক দফায় ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় শস্যখেত, উড়ে যায় বাড়ির টিনের চাল, ভেঙে পড়ে মাটির দেওয়াল। ঝড়ের দাপটে মাটিতে পড়ে যায় দরমা বেড়ার ঘরও। গ্রাম এলাকায় শস্যহানির ঘটনা বেশি ঘটলেও, ধূপগুড়ি-ময়নাগুড়ি দুই শহরে বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাত পর্যন্ত দুই শহরেরই বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধূপগুড়ি ব্লকের অন্তত দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা শিলা বৃষ্টিতে বিধস্ত হয়েছে। শুধু মাত্র গধেয়াকুঠি এলাকায় তিন শতাধিক কাঁচা বাড়ি নষ্ট হওয়ার খবর মিলেছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাদং-১, গাদং-২, বারোঘড়িয়া, সাকোয়াঝোরা-১, সাকোয়াঝোরা-২, ঝারআলতা-১ এবং ঝারআলতা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। ধূপগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবাশিস সর্দার বলেন, ‘‘সব্জির বিপুল ক্ষতি হয়েছে। বিঘার পর বিঘা বেগুন, ঝিঙ্গা, কপি, পাট খেত নষ্ট হয়েছে।’’

গধেয়াকুঠি এলাকার চাষি নরেশ রায় দাবি করেন, এ দিন বেশ কয়েকটি শিলের ওজন অন্তত ৫০০ গ্রাম ছিল। তিনি বলেন, ‘‘টিনের চাল ফুটো হয়ে গিয়েছে। খেতের ফসলও প্রচুর নষ্ট হয়েছে।’’ ময়নাগুড়ির অন্তত সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, ‘‘কোথায় কত ক্ষতি হয়েছে, এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

এ দিন জলপাইগুড়ি শহরেও বিকেল না গড়াতেই অাকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। সামান্য বৃষ্টিও হয় বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE