বালুরঘাটে মাঠেই পড়ে রয়েছে বোরো ধান।—নিজস্ব চিত্র।
সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় খোলা বাজারে দাম তলানিতে। বিপাকে পড়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের অধিকাংশ বোরো চাষি মাঠেই পাকা ধান ফেলে রেখেছেন। ধান কেটে বিক্রি করলে চাষের খরচ উঠবে না বলে আশঙ্কায় ভুগছেন চাষিরা। ফলে বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখন্ড অঞ্চলের কামারপাড়া, কুরমাইল সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিঘের পর বিঘে জুড়ে শুকিয়ে হলুদ হয়ে যাওয়া পাকা ধান জমিতেই ঝড়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চরম ক্ষতির আশঙ্কা করে জেলা জুড়ে বোরো চাষিদের মধ্যে হাহাকার উঠেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনও অবধি সরকারি স্তরে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি বলে চাষিদের অভিযোগ। রাজনৈতিক দলের একাংশ কৃষক সংগঠন ফসলের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে ব্লক স্তরে বিডিওদের স্মারকলিপি পেশ করেছেন। সে ভাবে সংগঠনগুলি চাষিদের হয়ে জোরালো সওয়াল তোলেনি বলেও বোরো চাষিদের অভিযোগ। ন্যায্যমূল্যের দাবিতে জেলা কংগ্রেস আগামী ১৩ মে জেলাশাসকের অফিস ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় রবিবার বলেন, ‘‘সরকারি সহায়ক দামে ধান কেনার পরিকল্পনা হয়েছে। আশা করি, খুব শীঘ্রই হাট থেকে চাষিদের উৎপাদিত ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।’’
তবে খাদ্য দফতরের ওই আশ্বাসে খুব একটা আস্থা রাখতে পারছেন না জেলার অনেক চাষিই। তাঁদের অভিযোগ, আমন মরসুমে প্রশাসন থেকে ব্লকভিত্তিক শিবির করে সহায়ক দামে ধান কেনা হয়েছিল। চালকল মালিকদের দিয়ে কেনা ওই ধানের চাল নাকি এখনও গুদাম ভর্তি হয়ে রয়েছে। তা না হলে গত একপক্ষ কাল যাবৎ জমি থেকে বাজারে ধান উঠতে শুরু করলেও প্রশাসনের তরফে সহায়ক দামে ধান কেনার কোনও উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি কেন? জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে এ জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টার জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি কিছু জমিতে হয়েছে গম ও সর্ষের চাষ। কিন্তু খোলা বাজারের নিয়ন্ত্রণ এক শ্রেণীর ফড়ে বা মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীর কব্জায় চলে যাওয়ায় বোরো ধানের দাম চাষিরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ জেলার তপন ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এবারে বোরো ধান উদপাদন হয়েছে। এলাকার গুড়ইল অঞ্চলের চাষি মতিবুল রহমান, ইসাক আলি চৌধুরী, নিতাই মন্ডলেরা অভিযোগ করেন, প্রতি কুইন্টাল ধানের সরকারি দাম সরকার থেকে ১৩৫০ টাকা বেঁধে দিলেও খোলা বাজারে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম নেমে হয়েছে ৬০০ টাকা। হাট গুলিতে ধানের দাম এর বেশি মিলছে না। এই দামে ধান বেচলে চাষের খরচ উঠবে না। তার উপর ধান কাটার মজুরির খরচ গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে বলে তাদের দাবি। ফলে বহু চাষি মনের দু:খে পাকা ধান জমিতেই রেখে চোখের জল ফেলছেন।
চাষিদের বক্তব্য, গত বছর খোলা বাজারে শুরু থেকে প্রতি কুইন্টাল ধানের দাম ছিল ৯০০ টাকা। এবারে এখনও পর্যন্ত দাম ওঠার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে চাষিরা প্রমাদ গুনছেন। গুরইল এলাকার চাষি সালিমুদ্দিন চৌধুরী জানান, চাষিদের কেউ এবারে এক একর কেউ বা ১০ একর জমিতে উচ্চফলনশীল পারি ধান (বোরো) লাগিয়েছিলেন। মতিবুল সরকারেরা জানান, এক বিঘে জমিতে ধানের উৎপাদন হয়েছে প্রায় পাঁচ কুইন্টাল। জলসেচ, সার সহ উৎপাদন খরচ হয়েছে বিঘা পিছু প্রায় ৪ হাজার টাকা। ধান কাটার খরচ বিঘা প্রতি প্রায় ১ হাজার টাকা। অথচ খোলা বাজারে ওই ধান বিক্রি করতে গেলে দাম মিলছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। চোখের সামনে দু’হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে দেখে বহু চাষি তাই ধান কাটার বাড়তি ১ হাজার টাকা টাকা বহন করতে চাইছেন না।
এলাকার বাম কৃষক সমিতির নেতা নীরদ দাসের অভিযোগ, গত ২৭ এপ্রিল পরিস্থিতি জানিয়ে বিডিওকে স্মারকলিপি দিয়েও কোনও কাজ হয়নি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, চাষিরা উৎপাদিত ফসলের দাম না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে এ জেলার ধান চাষিরা আলু চাষিদের মতো ভয়ানক খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। আগামী ১৩ মে বালুরঘাটে ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে চাষিদের নিয়ে জেলাশাসকের অফিস ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কংগ্রেস সভাপতি ঘোষণা করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy