Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

দুই জেলায় স্বাস্থ্যকর্তার হঠাৎ বদলি

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতিতে শুরু থেকেই রাজ্যের অনেক জেলাকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল আলিপুরদুয়ার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৬:৫৮
Share: Save:

এক সিএমওএইচ পারিবারিক কারণে স্বেচ্ছাবসর চেয়েছিলেন। আর আরেক সিএমওএইচের এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। বুধবার একসঙ্গে এই দুই সিএমওএইচ-এরই বদলির নির্দেশ বের হল। যার জেরে অবাক আলিপুরদুয়ার জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। আর এমন নির্দেশের কথা জেনে তো রীতিমতো স্বাস্থ্য দফতরের সামনেই বিক্ষোভে শামিল হলেন কোচবিহারের স্বাস্থ্যকর্মীরা।

রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই দুই বদলি নিয়ে বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার বা কোচবিহারের সিএমওএইচের সরে যাওয়া নিয়ে কিছু জানি না। খোঁজ নিতে হবে।’’ করোনা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘বদলির বিষয়টি জানতাম না। খোঁজ নেব।’’ সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক জানেন না কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর যে দায়িত্ব দিয়েছে, পালন করছি। ওই দুই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের পদে তো কেউ আসবেন। তাঁদের সঙ্গে তখন কথা হবে।’’

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতিতে শুরু থেকেই রাজ্যের অনেক জেলাকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল আলিপুরদুয়ার। যার জেরে কিছু দিন আগে এই জেলার ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্তা। কিন্তু সূত্রের খবর, করোনা মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপ নিয়ে প্রথম থেকে শাসকদল তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের মতভেদ শুরু হয়। অভিযোগ, শুরুর দিকে ব্যক্তিগতভাবে পিপিই সংগ্রহ ও কোয়রান্টিন সেন্টারের পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্যোগকে ঘিরে তৃণমূলের এক নেতা বিভিন্ন মহলে তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন। পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়ার জন্য এক স্বাস্থ্যকর্তার বিরুদ্ধে তৃণমূলের আর এক নেতার ক্ষোভ নবান্ন পর্যন্ত পৌঁছয় বলেও দল সূত্রে খবর। এই ঘটনাগুলি নিয়ে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ যথেষ্টই ক্ষুব্ধ।

তার উপর সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নমুনার পাহাড় জমার পর লালারস পরীক্ষা নিয়ে একের পর এক নির্দেশ ঘিরেও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে ক্ষোভ দানা বাধছিল। তার জেরেই সিএমওএইচ স্বেচ্ছাবসর চাইলেন কিনা, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়।

মঙ্গলবার এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পর আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ পূরণ শর্মা অবশ্য জানান, ‘‘এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

বুধবার তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামীও বলেন, ‘‘আমাদের দলের কোনও নেতা করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতরের কাজে নাক গলাননি। বরং স্বাস্থ্য দফতরকে তাঁরা প্রতি মুহূর্তে সহযোগিতা করে চলেছেন।’’ আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ-কে নিয়ে গোটা দিন যখন জেলার প্রশাসনিক মহলে হইচই চলছে, ঠিক তখনই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি নির্দেশ বের হয়। যেখানে আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচকে কলকাতায় কলকাতার পাস্তুর ইনস্টিটিউটে বদলির পাশাপাশি কোচবিহারের সিএমওএইচ-এরও বদলির কথা বলা হয়।

কোচবিহারে দিন কয়েক ধরেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছিল। তার মধ্যেই বদলি সিএমওএইচ-কে বদলি করা নিয়ে তাঁর দফতরের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনকি জেলাশাসকের দফতরের সামনে গিয়েও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।

কলকাতায় স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহারের জেলাশাসকের সঙ্গে মতভেদের ফলেও সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়কে বদলি করা হতে পারে। তাঁকে দ্রুত উত্তরকন্যায় গিয়ে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের সিএমওএইচ-দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে বলা হয়ছে। তাঁর বদলিতে অবাক জেলার অনেক স্বাস্থ্যকর্তা বলছেন, ‘‘জেলায় করোনা বাড়লেও সুমিতের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। বরং পরিস্থিতি তিনি ভাল সামলাচ্ছিলেন।’’ একই কথা আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ পূরণকে নিয়েও। সেখানে সিএমওএইচ হচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা। কোচবিহারে আসছেন কলকাতায় স্বাস্থ্যভবনে পোস্টেড এডিএইচএস (ট্রেনিং) রণজিৎ ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE