Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ে ভেঙে দেখা স্বপ্ন সফল স্বপ্নার

স্কুল ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে চেয়েছিলেন বাবা। তীব্র আপত্তি জানিয়ে স্কুলের শিক্ষিকাদের সাহায্যে আবার ফিরে আসতে পেরেছিল পড়াশোনার পরিবেশে। বালুরঘাট গার্লস স্কুলের ছাত্রী, হতদরিদ্র ঘরের সেই মেয়ে স্বপ্না রায়ই সবাইকে চমকে দিল তার মাধ্যমিকের ফলে।

স্বপ্না রায়। —নিজস্ব চিত্র।

স্বপ্না রায়। —নিজস্ব চিত্র।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

স্কুল ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে চেয়েছিলেন বাবা। তীব্র আপত্তি জানিয়ে স্কুলের শিক্ষিকাদের সাহায্যে আবার ফিরে আসতে পেরেছিল পড়াশোনার পরিবেশে। বালুরঘাট গার্লস স্কুলের ছাত্রী, হতদরিদ্র ঘরের সেই মেয়ে স্বপ্না রায়ই সবাইকে চমকে দিল তার মাধ্যমিকের ফলে।

দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের চালুন অঞ্চলের কানুপুকুর এলাকায় বাড়ি স্বপ্নার। বাবা মহেন রায় তপন ব্লকের আজমতপুর এলাকার একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। দুস্থ পরিবারটির তিন ছেলেমেয়ে বালুরঘাটের বিভিন্ন সরকারি স্কুলের হস্টেলে থেকে নিখরচায় লেখাপড়া করে। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বড় স্বপ্না। ভাল ছাত্রী হলেও এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তার। তপন ব্লকের আজমতপুরের ভুতকুঁড়ি এলাকার বাসিন্দা পেশায় ইটভাটার শ্রমিক এক যুবকের সঙ্গে মহেনবাবু সাড়ে ১৬ বছরের মেয়ে স্বপ্নার বিয়ে পাকা করেছিলেন। কয়েকমাস আগে বালুরঘাট গার্লস হাইস্কুলের হস্টেল থেকে দশম শ্রেণিতে পাঠরতা স্বপ্নাকে তিনি জোর করে বাড়িতে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। ছাত্রীটি বিয়ে করবে না বলে বেঁকে বসে। তীব্র আপত্তি জানিয়ে লেখাপড়া করবে বলে জানালেও অভিভাবকেরা তাতে কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ।

সেসময় স্কুলের শিক্ষিকাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে গঙ্গারামপুরের বিডিও বিশ্বজিৎ সরকার ছাত্রীটির বাড়িতে গিয়ে সকলকে বুঝিয়ে বিয়ে আটকান। ফের হস্টেলে ফিরে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি শুরু করে স্বপ্না। ওই ছাত্রীর মাধ্যমিকের সাফল্যের খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ওর মতো পরিবারের ছাত্রীদের কাছে এই লড়াই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠল।’’ আগামীতে লেখাপড়ার জন্য স্বপ্নাকে সব রকম সহায়তা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শৌচাগারহীন ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘরের বাসিন্দা স্বপ্নার অভিভাবকরা অভাবের কারণেই মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন বিডিওকে। শেষে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়া অপরাধ বলে বোঝানোয় এবং ছাত্রীর পড়াশোনাতে সমস্ত রকম সহায়তা করা হবে বলে বিডিও আশ্বাস দেওয়ায় মত পাল্টান তাঁরা। পরে ওই দুঃস্থ পরিবারের জন্য গীতাঞ্জলী প্রকল্পে বাড়ি এবং পাকা শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়।

ফল প্রকাশের পর স্কুলে মার্কশিট নিতে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকা ভবানী সরকারের ঘরে ঢুকতেই সকলে তার লড়াইকে সম্মান জানিয়ে খুশিতে ভাসেন। গড়ে ৯৩ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছে স্বপ্না। মোট প্রাপ্ত ৬৪৮। বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৭৬, অঙ্কে ৯৯, ভৌতবিজ্ঞানে ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯১ এবং ভুগোলে ৯৩ নম্বর পেয়েছে সে। তফসিলি জাতিভুক্ত ওই ছাত্রীকে আগামীতে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেন প্রধান শিক্ষিকা। স্বপ্নাও জানিয়েছে, সে আরও লেখাপড়া করতে চায়। আপাতত উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করাই পাখির চোখ দিনমজুর পরিবারের ওই ছাত্রীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE