Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া পাওনার দাবিতে পথে চা শ্রমিকরা

দীর্ঘদিন ধরে পাওনা মেলেনি। প্রতিবাদে সোমবার রাস্তায় নামলেন ডানকানস গোষ্ঠীর আটটি বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক। এদিন দুপুরে ডুয়ার্সের বীরপাড়া শহরে শ্রমিকরা মিছিল করে সহকারি শ্রম আধিকারিকের দফতরের সামনে আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। তার পরে পাঁচটি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে শ্রমিকেরা স্মারকলিপি দেন।

চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরে পাওনা মেলেনি। প্রতিবাদে সোমবার রাস্তায় নামলেন ডানকানস গোষ্ঠীর আটটি বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক। এদিন দুপুরে ডুয়ার্সের বীরপাড়া শহরে শ্রমিকরা মিছিল করে সহকারি শ্রম আধিকারিকের দফতরের সামনে আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। তার পরে পাঁচটি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে শ্রমিকেরা স্মারকলিপি দেন। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে বড় ধরণের আন্দোলনে নামার হুমকি দেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, ‘‘ডানকানস গোষ্ঠীর বাগানগুলির শ্রমিকদের প্রচুর বকেয়া রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আগামী ২২ এবং ২৩ এপ্রিল শিলিগুড়িতে ফের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হবে।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গে ওই গোষ্ঠীর ১৪ টি চা বাগান রয়েছে। ১৯ হাজার স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি আরও ১৪ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক বাগানগুলিতে কাজ করছেন। গত দুই বছর ধরে বাগানগুলির শ্রমিকদের রেশন ও বেতন অনিয়মিত হতে শুরু করে। এক বছরের বেশী সময় ধরে রেশন বন্ধ। দু’ মাস ধরে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন বন্ধ করার পাশাপাশি বিদ্যুতের বকেয়া বিল না মেটানোয় শ্রমিক বস্তি অন্ধকারে। জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জল না মেলায় ভুটান পাহাড় লাগোয়া বীরপাড়ার ছ’টি চা বাগানের শ্রমিকরা কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে জল নিয়ে আসেন। জেনারেটরের মাধ্যমে বাগানের কারখানা চালু রেখে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়। এদিন আধবেলা বাগানের কাজ করে বীরপাড়া শহরে জড়ো হয়ে আটটি বাগানের শ্রমিকরা এদিন রীতিমত বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষ পাওনা না দেওয়ায় শ্রমিক মহল্লায় খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। শ্রমিক বস্তির ছেলেমেয়েদের স্কুল যাতায়াত বন্ধ। খাদানে গিয়ে পাথর ভেঙে উপার্জন করে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। যাদের বাগানে কাজ নেই তাঁরাও দিন মজুরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজ না মেলায় অনেকেই অর্ধাহারে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ ইনটেকের চা শ্রমিক ইউনিয়ন এনইউপিডব্লিউ নেতা মনি ডারনালের কথায়, ‘‘শ্রমিকদের অবস্থার কথা ভাবা যায় না। কর্তৃপক্ষ পাওনা গণ্ডা মেটাবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা মেটাচ্ছেন না।’’ আরএসপি শ্রমিক নেতা গোপাল প্রধান বলেন, ‘‘বাগানগুলির শ্রমিকেরা দু বছর ধরে রেশন পাচ্ছে না। তার উপর বেতন বন্ধ। বিদ্যুৎ না থাকায় জল নেই। শ্রম আধিকারিককে দ্রুত বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেবার দাবি করেছি। সরকার ঠিকমত হস্তক্ষেপ না করলে বড় ধরণের আন্দোলনে নামব।’’

ওই গোষ্ঠীর বীরপাড়া চা বাগানের শ্রমিক বসন্ত মুন্ডার কথায়, ‘‘আমাদের বাগানগুলির এই অবস্থায় দাঁড়াবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। বন্ধ বাগানের শ্রমিকেরা সরকারি সাহায্য ও রেশন পায় অন্তত। আমরা তো কিছুই পাচ্ছি না। এ ভাবে কিছুদিন চললে না খেয়ে মরতে হবে।’’ ডিমডিমা চা বাগানের দফাদার ভগরাজ খালকো বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ জল পর্যন্ত দিচ্ছে না। সরকার কেন এত দিন নীরব তা বুঝতে পারছি না।’’ বিষয়টি নিয়ে ওই গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট কেকে মেহরার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন পাওয়া যায়নি। ডানকানস গোষ্ঠীর একটি চা বাগানের ম্যানেজারের কথায়, ‘‘বাগানগুলি লোকসানে চলছে, ফলে এই অবস্থা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE