‘কাম কৈরি, লেকিন পয়সা নেহি মিলে’৷ অর্থাৎ, কাজ করি কিন্তু টাকা মেলে না৷একশো দিনের কাজ নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার চা বলয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় সাধারণ মানুষের এটাই মূল অভিযোগ৷ তাঁদের বক্তব্য, একে তো একশো দিনের কাজ ঠিকমতো মেলে না৷ তার পরে ন’মাসে ছ’মাসে যদি বা কাজ মেলে, তার টাকা হাতে পেতে কোনও কোনও সময় লেগে দেড়-দু’বছরও। আর দীর্ঘদিন টাকা বকেয়া পড়ে থাকার অর্থ, কিছু টাকা মার যাবেই।
রুগ্ণ ও বন্ধ চা বাগানে একশো দিনের কাজ চালু করা নিয়ে রাজ্য অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছে। সেই মতো আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ অংশে এমন বাগানের শ্রমিকরা একশো দিনের কাজ করেও থাকেন। বস্তুত, বন্ধ বাগানে এটাই একমাত্র রুজি-রোজগারের পথ। আর সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে শ্রমিকদের পরিবারগুলি। বীরপাড়া চা বাগান এলাকার বাসিন্দা লচ্ছু ওঁরাও কিংবা রিনা নাগদের অভিযোগ, ‘‘১৪ মাস আগে শেষবার একশো দিনের কাজ করেছি৷ সেই টাকা এখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি৷’’
আগামী সপ্তাহের গোড়ায় উত্তরবঙ্গ সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহার, জলপাইগুড়ির সঙ্গে আলিপুরদুয়ার জেলা নিয়েও প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা তাঁর। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরে চা বলয়ের উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে এর মধ্যেই তৃণমূলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর বড় কারণ, চা বলয়ে ক্রমেই বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি। এতটাই যে পাঁচটি বন্ধ চা বাগান খোলার কথা ঘোষণার পরেও তাদের ভোটব্যাঙ্কের বিশেষ হেরফের হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে একশো দিনের কাজের উপরে মুখ্যমন্ত্রী আলাদা ভাবে জোর দেবেন বলেই ধারণা প্রশাসন ও তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের। আর এখানেই গলদের অভিযোগ উঠছে সমানে। বিজেপির চা বলয় এলাকার নেতা তথা মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গার অভিযোগ, ‘‘চা বলয়ে একশো দিনের কাজ নিয়ে বড় সড় দুর্নীতি চলছে৷ একে তো বছরে ১৪-১৫ দিনের বেশি কাজ পাচ্ছেন না এখানকার মানুষ৷ তার ওপর নানা ভাবে তাঁদের প্রাপ্য টাকা শাসকদলের নেতারা আত্মসাৎ করে দিচ্ছেন৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যত জন কাজ করছেন, তার চেয়ে শ্রমিকের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে সেই অতিরিক্ত সরকারি টাকাও নিজেদের পকেটে ঢোকাচ্ছেন কেউ কেউ।’’ যদিও দুর্নীতির অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব৷ দলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা বলেন, ‘‘এটা ঘটনা যে, অনেক ক্ষেত্রে একশো দিনের টাকা পেতে মানুষের দেরি হচ্ছে৷ তার কারণ কেন্দ্রীয় সরকার দেরিতে টাকা পাঠাচ্ছে৷ কিন্তু একশো দিনের কাজ একেবারে কম হচ্ছে কিংবা কারও প্রাপ্য টাকা মাঝপথে উধাও হয়ে যাচ্ছে— এমন অভিযোগ ঠিক নয়৷’’
শুধু একশো দিনের কাজ নিয়েই নয়, রাস্তা-পানীয় জল থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ চা বলয়ের সাধারণ মানুষদের৷ এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে চা বলয় এলাকায় রাজ্যের শাসকদলের খারাপ ফলের অন্যতম কারণও সেইটাই, মত তাঁদের একাংশের। যার জেরে চা বলয় এলাকায় উন্নয়নে ইতিমধ্যেই জোর দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা৷ আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তারা বলেন, ‘‘চা বলয় এলাকার সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি সব প্রকল্পের সুবিধা সঠিক ভাবে পান তার চেষ্টা চলছে৷ জেলাশাসক নিখিল নির্মল জানান, ‘‘এক দিনের কাজের টাকা তিন মাসের মধ্যেই সবাই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু কোথাও এর অন্যথা হলে কিংবা আমাদের কেউ লিখিত অভিযোগ জানালে অবশ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy