Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাকু নেই! কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বপ্না

যার হাত ধরে অ্যাথলেটিক্সের জগতে আসা, তিনি যে আর নেই তা আগেই শুনেছিলেন। কিন্তু তখনই বাড়ি আসতে পারেননি।

দুঃখ: সমীর দাসের ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বপ্না। ছবি: সন্দীপ পাল

দুঃখ: সমীর দাসের ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বপ্না। ছবি: সন্দীপ পাল

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় 
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

যার হাত ধরে অ্যাথলেটিক্সের জগতে আসা, তিনি যে আর নেই তা আগেই শুনেছিলেন। কিন্তু তখনই বাড়ি আসতে পারেননি। তারপরে এশিয়ান গেমসের আসরে সোনা জয় করে বাড়ি ফিরেছেন স্বপ্না। শনিবার আরএসএ-এর মঞ্চে উঠতে গিয়ে যখন দেখলেন তাঁর সেই প্রিয় মানুষটার ছবি মালা দিয়ে সাজানো। তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলেন, কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বপ্না। তাঁকে কোনওমতে সামলান উপস্থিত কর্মকর্তারা, বসিয়ে দেন মঞ্চের চেয়ারে।

এ দিন জলপাইগুড়িতে আরএসএ ক্লাবের সানুভবন সংলগ্ন মাঠে স্বপ্নাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। সেখানেই মঞ্চের সামনে ক্লাবের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সমীর দাসের ছবি মালা দিয়ে সাজানো ছিল। তা দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বপ্না। ২০০৬ সালে স্বপ্না তখন হাইজাম্পে জুনিয়ার বিভাগে সবে সাফল্য পেতে শুরু করেছেন। স্বপ্নার বাবা তখন ভ্যান চালান। মা চা শ্রমিক। দরিদ্র পরিবারে খেলাধুলো ছিল বিলাসিতা। ঘোষপাড়া থেকে এসে আরএসএ ক্লাবে অনুশীলন করার সামর্থ্য ছিল না স্বপ্নার। তখন তাঁকে পদে পদে সাহায্য করেছিলেন সমীর দাস। তিনি স্বপ্নাকে একটা সাইকেল কিনে দেন। মায়ের সঙ্গে সেই সাইকেলে চেপে রোজ আরএসএ ক্লাবের মাঠে অনুশীলন করতে আসতেন স্বপ্না। পরে তিনি বলেন, ‘‘সমীর কাকু যদি আমায় আরএসএ ক্লাবে নিয়ে না আসতেন তাহলে আমি আজ এই ভিড় দেখতাম না।’’ আরএসএ ক্লাবকেও অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

এ দিন স্বপ্না তাঁর প্রথম কোচ সুকান্ত সিংহকে ধন্যবাদ জানান। ২০০৬-২০১৩ পর্যন্ত স্বপ্না আরএসএ ক্লাবে অনুশীলন করেছেন। স্বপ্না বলেন, “সুকান্তদা আমাকে সেই সময় হাইজাম্প অনুশীলন করাতেন।” সুকান্ত সিংহকেও এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ২০১৩ সাল থেকেই স্বপ্না কলকাতার সাইতে সুভাষ সরকারের অধীনে অনুশীলন শুরু করেন।

এ দিনের অনুষ্ঠানে স্বপ্নাকে ঘিরে স্থানীয়দের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাতে সাড়াও দিয়েছেন তিনি। অকাতরে সই বিলিয়েছেন, আবদার মেটাতে তুলেছেন নিজস্বীও। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে সবার বারংবার আবদারে এক লাইন গান গেয়েও শুনিয়েছেন।

এ দিনই আরএসএ ক্লাব থেকে স্বপ্না যান সাইয়ের কমপ্লেক্সে। সেখানে তাঁকে সংবর্ধনা জানান সাইয়ের জলপাইগুড়ির অধিকর্তা ওয়াসিম আহমেদ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে স্বপ্না বলেন, “আত্মবিশ্বাস রাখবে, কোচের কথা মেনে চলবে এবং নিয়মানুবর্তী হবে। তবেই সাফল্য আসবে।” সবশেষে আইটিপিএ হলে মহিলাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এখানে আসেন উঠতি অ্যাথলেট রিঙ্কি মাঝি। স্বপ্না তাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “ভাল করে অনুশীলন করবে।” উত্তরে রিঙ্কি বলে, “আমার কেবল খেলার খিদে আছে।”

এ দিন এখানে স্বপ্নার হাতে শিল্পপতি মহেন্দ্র নাহাটার দেওয়া ১০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন প্রাক্তন সাংসদ দেবপ্রসাদ রায়। ফুলের তোড়া দেন জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সৈকত চট্টোপাধ্যায়। একটি সংগঠনের সম্পাদক সুব্রত বাগচী জানান, তাদের পক্ষ ধেকে সোমবার কলকাতার প্লেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে স্বপ্নাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swapna Barman Athlete
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE