পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সব্যসাচী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
তোর জন্মটাই তো ইতিহাস! মায়ের কাছে এ কথা পরে বহুবার শুনেছেন সব্যসাচী ঘোষ। ছোটবেলায় তার অর্থ বোঝেননি। মঙ্গলবার দুপুরে জলপাইগুড়ি নিউ সার্কুলার রোডের ছাদ পেটানো বাড়িতে বসে প্যান কার্ড মেলে ধরলেন। তাতে লেখা, জন্মের তারিখ ১৫ অগস্ট ১৯৪৭। ঠিক যে দিন দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সে দিনই জন্ম তাঁর। সব্যসাচীবাবু এবং দেশের স্বাধীনতা সমবয়সী।
আশির দশকে পক্ষাঘাতে ডান হাত অনেকটাই অসাড় হয়ে গিয়েছে তাঁর। এক সময়ে ঠিকাদারি করতেন, এখন চলাফেরার সমস্যার জন্য তা-ও বন্ধ। শরীরে ধীরে ধীরে জরা থাবা বসিযেছে। সব্যসাচীবাবুকে পাড়ার সকলে চেনেন রতন নামে। এ দিনই রতনবাবুর বাড়িতে হাজির এলাকার কাউন্সিলর লোপামুদ্রা অধিকারীর স্বামী সুবীরবাবু। আজ, বুধবার স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন হবে ওয়ার্ডে। পতাকা তোলার পরে শিশুদের চকোলেট বিলি করা হবে। ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হবে রতনবাবুকে। কাউন্সিলর লোপামুদ্রা বলেন, ‘‘রতনবাবুর জন্ম যে স্বাধীনতার দিন, জানতামই না। ঠিক করেছি, আমাদের অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবর্ধনা দেব।”
জন্মের সময় জানেন না রতনবাবু। তবে তিনি গর্ভে ছিলেন বলেই তাঁর বাবা-মায়ের সেই সময়ে দেশ ছাড়া হয়নি বলে শুনেছেন। রতনবাবুর বোন শম্পা ঘোষ পাল বলেন, “মায়ের কাছে শুনেছি, তখন দেশভাগ চলছিল। পূর্ববঙ্গ থেকে দলে দলে লোক আসতে শুরু করেছে। বাবা-মায়েরাও দেশ ছাড়বেন। কিন্তু দাদা তো তখন মায়ের পেটে। তাই ওঁরা থেকে যান।” রতনবাবু জানেন, স্বাধীনতার দিন তখন তাঁর জন্মভিটে উত্তাল। কোথাও দাঙ্গা চলছে, কোথাও স্বাধীনতার উৎসব, কোথাও আবার ছিন্নমূল হওয়ার কান্না। চারদিক থেকে অবাধ লুঠপাটের খবর আসছে। তিনি বলেন, “আমার জন্মের ছ’মাস পরে বাবা-মা পূর্ববঙ্গ ছেড়ে চলে আসেন। আমাদের অনেক জমিজমা ছিল। সে সব কোথায় গিয়েছে কে জানে!”
সরকারি যাবতীয় নথিতেও রকনবাবুর জন্ম তারিখ সাতচল্লিশের ১৫ অগস্টই। বললেন, “মা মারা যাওয়ার পরে আর কোনও দিন আমার জন্মদিনে পায়েস হয়নি। সারা শহর, সারা দেশে এই দিনে দিনটায় উৎসব হয়, তাতেই আমার জন্মদিন পালন।” তবে এর আগে স্বাধীনতা দিবসের কোনও অনুষ্ঠানে তিনি ডাকও পাননি। গত বছর পূর্ত দফতরের এক কর্মী অর্ণব গুহ সোশ্যাল মিডিয়ায় রতনবাবুর ছবি দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এবং তাঁর জন্ম একই দিনে তা জানিয়েছিলেন। তা থেকেই অনেকে জানতে পারেন। সেই খবর শুনেই ডাক পড়েছে কাউন্সিলরের অনুষ্ঠানে। অর্ণবদের নিজস্ব সংগঠন থেকে আজ রতনবাবুর বাড়ি গিয়ে পায়েস খাওয়ানোর পরিকল্পনাও করেছে।
রতনবাবুর বোন পড়শি তনুজা সরকারও চলে এসেছিলেন মঙ্গলবার দুপুরে। তিনি বলেন, “জন্মদিন পালন করা হয় না বলে দাদার একটু অভিমানও ছিল। এ বার ৭২ বছরের জন্মদিনে সে অভিমান কাটবে।” রতনবাবু এবং দেশের স্বাধীনতা, দুই-ই এ বছর বাহাত্তরে পা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy