Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চোখ দান? উত্তর নেই

গোটা উত্তরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো আলিপুরদুয়ারের একটি বেসরকারি সংস্থার এই পরিকাঠামো রয়েছে। বেসরকারি সংস্থাটি এখনও পর্যন্ত একশো জনের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছে।

চক্ষুদান: আঁকা হচ্ছে দেবী দুর্গার চোখ। শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

চক্ষুদান: আঁকা হচ্ছে দেবী দুর্গার চোখ। শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

দেবী বুঝি তাঁকেই প্রথম দেখতে পাবেন। প্রতিবার দেবীর চোখ আঁকার পরে এমনটাই মনে হয় বাসন্তী পালের। সেই ছোটবেলা থেকে দেবীর চক্ষুদান করছেন তিনি। বাসন্তী বলেন, ‘‘প্রতিমার মতো কোনও দৃষ্টিহীন মানুষকেও যদি চক্ষুদান করতে পারতাম!’’

কিন্তু শিল্পীর এই ভাবনাটুকুই সার। মরণোত্তর চক্ষুদান এবং দেহদানের ইচ্ছাপত্রে জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গে দেদার সই হয় বটে। কিন্তু কোনও পরিকাঠামোই নেই। চিরাচরিত রীতি মেনে আজ, শনিবার মহালয়ার দিন রাশি রাশি দুর্গা প্রতিমায় চোখ আঁকা হবে। ‘দৃষ্টি’ দেওয়া হবে মাটির মায়ের মূর্তিতে। উত্তরের দৃষ্টিহীন সাধারণ মানুষগুলি কবে সে সুযোগ পাবেন, সে প্রশ্ন নিয়ে পার হবে আরও একটি মহালয়া।

দৃষ্টিহীনদের চোখ দান করার অর্থ কর্নিয়া প্রতিস্থাপন। এই প্রতিস্থাপন তখনই সম্ভব, যদি কেউ মরণোত্তর চোখ দান করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর পরে কর্নিয়া সংগ্রহ করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দৃষ্টিহীন কারও চোখে প্রতিস্থাপন করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত গ্রীষ্মকাল হলে মৃত্যুর চার ঘণ্টার মধ্যে এবং শীতকাল হলে ৬ ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হবে। উত্তরবঙ্গের জেলা হাসপাতালগুলির কোথাও এই পরিকাঠামো এই মুহূর্তে নেই।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুশান্ত রায় আশির দশকে যখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ছিলেন, মেডিক্যাল কলেজেই কর্নিয়া প্রতিস্থাপন হয়েছে। শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি সংস্থাতেও বছর দু’য়েক সে সুযোগ ছিল। সুশান্তবাবু বলেন, “সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো থাকলেই উত্তরের সাধারণ মধ্যবিত্ত দৃষ্টিহীনরা দৃষ্টি ফিরে পাবেন।” একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার দেবাশিস চক্রবর্তীও বলেন, “আমার অন্তত কয়েকশো পরিচিত রয়েছেন, যাঁরা মৃত্যুর পরে নিজেদের চোখ দান করতে চান। কিন্তু সেই চোখ নেওয়ার কেউ নেই।”

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চক্ষু বিভাগের এক প্রতিনিধি দল জলপাইগুড়ি হাসপাতালের চোখের বিভাগ দেখে প্রশংসা করেছেন। কিন্তু সেখানে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের সুযোগ নেই শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন বলেও খবর। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো তৈরি করতে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না বলে দাবি। প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ দক্ষ চিকিৎসকের। সেই চিকিৎসক উত্তরবঙ্গে এখনও সমস্যা।

নিয়মিত যে মরনোত্তর চক্ষুদানের ইচ্ছাপত্রে সই হচ্ছে, তাঁর কী পরিণতি হচ্ছে? মরণোত্তর দান নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য নিত্যানন্দ বর্মণ বলেন, “সেই ইচ্ছেপত্রের কোনও মূল্য থাকছে না। আমাদের আশা, বহু মানুষ এগিয়ে এসে ইচ্ছেপত্রে সই করলে, একদিন সরকার এখানে পরিকাঠামো তৈরি করবেন।”

গোটা উত্তরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো আলিপুরদুয়ারের একটি বেসরকারি সংস্থার এই পরিকাঠামো রয়েছে। বেসরকারি সংস্থাটি এখনও পর্যন্ত একশো জনের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছে। যেহেতু চার ঘণ্টার মধ্যে মৃত ব্যক্তির চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয় সে কারণে পাশের জেলা বা শহর থেকে ডাক এলেও যেতে পারেন না তাঁরা।

কিন্তু সাধারণ একটি বেসরকারি সংস্থা যা করতে পারে সরকারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজগুলি কেন পারে না? মালদহের এক সরকারি চিকিতসকের মন্তব্য, “পুরোটাই সদ্দিচ্ছার প্রশ্ন।” পরিকাঠামো তৈরি হতে আরও কত মহালয়া পেরিয়ে যাবে, তার উত্তর নেই কারও কাছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Donation Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE