Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে রাম-কথা

বংশপরম্পরায় আমাদের গ্রামের শিল্পীরা পটুয়ার কাজই করেন। পুজোর আগে উত্তরবঙ্গ ছাড়াও নানা এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয়। এনজেপি-র এই পুজো মণ্ডপে ন’দিন হল কাজ করছি। 

প্রায় ১৩ বছর ধরে একটু একটু করে শিখেছি মঙ্গলকাব্য, রামায়ণ, মহাভারতের নানা কাহিনীর ছবি আঁকতে। নিজস্ব চিত্র।

প্রায় ১৩ বছর ধরে একটু একটু করে শিখেছি মঙ্গলকাব্য, রামায়ণ, মহাভারতের নানা কাহিনীর ছবি আঁকতে। নিজস্ব চিত্র।

নাজু চিত্রকর, পটুয়া
পশ্চিম মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:১১
Share: Save:

আমার আব্বা নৈমুদ্দিন চিত্রকর কালীঘাটে মূর্তি গড়তেন। দাদু রমজান চিত্রকরও প্রতিমাশিল্পী ছিলেন। এই প্রজন্মে তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবলমাত্র আমিই পটুয়া। প্রায় ১৩ বছর ধরে একটু একটু করে শিখেছি মঙ্গলকাব্য, রামায়ণ, মহাভারতের নানা কাহিনীর ছবি আঁকতে। পিংলা থানার অধীনে ছোট্ট গ্রাম নয়ার বাসিন্দা আমরা। সেখানে চিত্রকর উপাধিপ্রাপ্ত আশি ঘর মুসলিম শিল্পী পটচিত্রের এই ধারা এগিয়ে নিয়ে চলেছি। বংশপরম্পরায় আমাদের গ্রামের শিল্পীরা পটুয়ার কাজই করেন। পুজোর আগে উত্তরবঙ্গ ছাড়াও নানা এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয়। এনজেপি-র এই পুজো মণ্ডপে ন’দিন হল কাজ করছি।

ছোটবেলা থেকেই আমার বাঁ হাতের অসুখ। ফোলা হাত নাড়াতে পারি না। বেঙ্গালুরুতেও গিয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য। এখন ওষুধ খেতে হয়। তাই এক হাতেই তুলির টানে ফুটিয়ে তুলি রামায়ণ-মহাভারতের ছবি। আমাদের পরিবারে ছেলেমেয়েরা বড় হয় মহাকাব্যের কাহিনি শুনতে শুনতে। কারণ, আমাদের মতো পটুয়া শিল্পীর দু’বেলার ভাত তো এই কাহিনিগুলোই জোগায়। পরিবারে নানা সমস্যা রয়েছে। যৌথ পরিবারে আমরা ১২ জন মানুষ। দুই ভাই ভিন রাজ্যে সোনার দোকানে কাজ করে। আমার হাতটা খারাপ বলে মরসুমের বাইরে অন্য কাজ করতে পারি না।

পটুয়ার কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলে যায়। রাজ্য সরকারের তরফে একটি লোকশিল্পী কার্ড পেয়েছি। তাতে মাসে এক হাজার টাকা করে অনুদান পাই। কখনও টাকা সময়ে মেলে, কখনও দেরি হয়। তখন সংসার টানতে একটু কষ্টই হয়। তুলি, রঙ কেনারও পয়সা থাকে না। বাধ্য হয়েই ধার করতে হয়। তবে পুজোর এই সময়টা এলে কিছুটা স্বস্তি। পিংলাতেই শীতের সময় পটুয়ামেলায় হাজির হন বিদেশিরা। কিছু বিক্রিবাটা হয়। তার পর কয়েক মাস বেশ অসুবিধার মধ্যেই চলে। আমাদের গ্রামের অনেকেই তখন বিকল্প জীবিকা হিসেবে গান-বাজনা করে।

এই পেশার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের নাড়ির টান। স্মৃতিতে রাখতে হয় বেশ কয়েকটি মহাকাব্যের ঘটনাক্রম। তবে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। চোখ বুঝলেই ছবির মতো চলে আসে মনসামঙ্গল, কৃষ্ণলীলা, গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের ছবি। হিন্দু পুরাণের বেশিরভাগ ছবিই আমাদের চিন্তায় গাঁথা থাকে। এনজেপি-র এই মণ্ডপেও এ বার বেশ কয়েকটি ছবি এঁকেছি। পুজোর সময় আমাদের গ্রামে পুজো হয় না। কিন্তু পাশের গ্রামে পুজো দেখতে সপরিবার হাজির হই আমরা। স্ত্রী মাবিয়া, ছেলে সোহেল আমার কাজে হাত লাগায় কখনও। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছি। কিন্তু পটুয়াশিল্পের ধারা থেকে তাকে আলাদা করা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalighat Patochitro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE