পুরোহিত নিয়ে টানাটানি কোচবিহারে। — হিমাংশুরঞ্জন দেব
কারও মোবাইল বন্ধ দিনভর। সাইকেল নিয়ে যাওয়ার পথে কারও পিছনে ধাওয়া করলেন বাসিন্দারা। চলল অনুনয়, বিনয়। শেষপর্যন্ত একটু জোরাজুরি, যেন আদুরে ‘হুমকি’।
লক্ষ্মীপুজোর দিনে কোচবিহারের বহু এলাকাতেই পুরোহিতকে নিয়ে এ ভাবেই চলল টানাটানি। পুরোহিতদের অনেকে জানান, এই একটা দিনে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই পুজো হয়। স্বাভাবিক ভাবেই চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু তাঁদের পক্ষে সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। কোচবিহারের কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা পুরোহিত বিমল চক্রবর্তী জানান, তিনি এ বারে তিরিশটি পুজো নিয়েছেন। পঁচিশজনকে অবশ্য তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। বললেন, “বাড়ি থেকেই অনেককে না করে দিয়েছি। একদিনে তিরিশের উপরে পুজো করা সম্ভব নয়। তার পরেও রাস্তায় অনেকে অনুরোধ করছে। না করতে পাচ্ছি না।”
স্টেশন মোড় লাগোয়া এলাকার পুরোহিত মদন ঠাকুর। সকাল সকাল তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হন ডলি লামা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। তাঁর প্রতিবেশীর পুজো করে দেওয়ার ব্যাপারে আর্জি জানাতে মদনবাবুর দেখা করতে এসেছেন। বেশ কিছুক্ষণ মদনবাবুর দেখা পেলেও তিনি কোন এলাকায় কত পুজো নিয়েছেন বলতে রাজি নন। শুধু বললেন, “শেষ করতে সারা রাত লেগে যাবে। তার পরেও অনেকে টানাহেঁচড়া করে। তাই ঠিকানা না জানানোই ভাল।” ডলিদেবীর পুজো করতে তিনি অবশ্য রাজি হয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে সব তৈরি রাখতে বলেছেন। ডলিদেবী বলেন, “পুরোহিত পাওয়া খুব কষ্টের ব্যাপার।” কেউ কেউ তো আবার পুরোহিত না পেয়ে নিজেরাই পুজো সেরেছেন। মসজিদ পাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, “অনেক চেষ্টা করেছি। কয়েকজন পুরোহিতের কাছে গিয়েছি। সবাই আগে থেকে বায়না হয়ে গিয়েছেন। তাই নিজেই পুজো করে নিলাম।”
উত্তরবঙ্গ পুরোহিত মঞ্চের তরফেই জানা গিয়েছে, আগের তুলনায় এখন পুরোহিতের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। যে এলাকায় তিন থেকে চারজন পুরোহিত ছিল এখন সেখানে একজন পুরোহিত রয়েছেন। অনেকের অভিযোগ, পুরোহিতের কাজে যারা নিযুক্ত তাদের আর্থিক অনটনের মধ্যে থাকতে হয়। সব সময় পুজোর চাহিদা থাকে না। সেই সময় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয় তাদের। তাই অনেকেই পুজোর কাজ থেকে সরে গিয়েছেন। অনেক এমন পরিবারও রয়েছে যে ঘরের ছেলেমেয়েরা সঠিক ভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি। তাই পুজোর মন্ত্র ঠিকঠাক উচ্চারণ করতে পারেন না। তাঁরাও পুরোহিতের কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সে কারণেই লক্ষ্মীপুজোর সময় পুরোহিত পাওয়া যায় না। ওই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত পুরোহিত জয়দেব ভৌমিক জানান, তিনি তিরিশটির উপরে পুজো নিয়েছেন এ বারে। তিনি বলেন, “অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হইয়েছে। কিছু করার ছিল না।” মঞ্চের সম্পাদক কৃষ্ণপদ ভট্টাচার্য বলেন, “এখন সময় এসেছে পুরোহিতদের জন্য ভাবনাচিন্তা করার। না হলে আগামীতে ওই সংখ্যা আরও কমে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy