নাটকীয় ভাবে গ্রেফতার হল চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা চক্রের তিন পাণ্ডা। বন দফতর এবং পুলিশের সন্দেহ, বন দফতরে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছে এই তিন জন। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বন দফতরের প্যাড জাল করে ছাপা ‘জয়েনিং লেটার’ও। বুধবার সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে রুটিনমাফিক টহল দিচ্ছিলেন স্পেশাল ফরেস্ট টাস্ক ফোর্সের প্রধান তথা বেলাকোবা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত। শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ির কাছে তার গাড়ি থামান এক যুবক।
জলপাইগুড়ির বাহাদুর অঞ্চলের বাসিন্দা খইবুল হক নামে ওই যুবক যা জানান তাতে চোখ কপালে ওঠে সঞ্জয়বাবুর। ওই যুবক জানান তাকে দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে বনদফতরে চাকরির টোপ দিয়েছে কয়েকজন। ইতিমধ্যে ২৫ হাজার টাকা দিয়েও দিয়েছেন তাদের। আরও এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা দাবি করা হয় তার কাছে। জানানো হয়, সেই টাকা দিলে তবেই মিলবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার। কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন এখন ৬৬ হাজার টাকা দিতে পারবেন। তারা রাজি হয়। সেই ৬৬ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এ দিন তাকে ফুলবাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়। কথা ছিল সেই টাকা পেলে খইবুলের হাতে তুলে দেওয়া হবে ‘জয়েনিং লেটার’। কিন্তু তাদের কথাবার্তায় যুবকের সন্দেহ জাগে চাকরির ব্যাপারটি ভুয়ো। ওই চক্রের পাণ্ডাদের জন্য অপেক্ষা করার সময় সে সঞ্জয়বাবুর গাড়ি দেখতে পেয়ে তাঁকে থামায়। সব ঘটনা খুলে বলে। সঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, তার কাছে দিন কয়েক আগেই নিজস্ব সূত্র এবং সিআইডি মারফত এ রকম জাল-চক্রের খবর এসেছিল।
এ দিন সব শুনে তিনি দুই-দুই চার করে ছক কষে ফেলেন দুষ্ট চক্র ধরার। যোগাযোগ করেন রাজগঞ্জ থানার ওসি তমাল দাসের সঙ্গে। তিনি সব জেনে পুলিশ পাঠিয়ে দেন। এরপর পুলিশ এবং বন দফতরের কর্মীরা আড়ালে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি গাড়ি নিয়ে আসে তিন যুবক। হাতেনাতে তাদের পাকড়াও করে পুলিশ ও বনকর্মীরা। তাদের বেলাকোবা রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসা হয়। তাদের কাছ থেকে খইবুল হকের নাম লেখা একটি বন দফতরের গার্ড পদে যোগ দেওয়ার জন্য ‘জয়েনিং লেটার’ পাওয়া যায়। সঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, সেটি জাল নিয়োগপত্র। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ধৃতদের মধ্যে শুভম ঢালি শিলিগুড়ির, বিক্রম সিংহ মালদহ এবং প্রদীপ ঘোষ দমদমের বাসিন্দা। তাঁদের জেরা করে চক্রে জড়িত আরো পাঁচ জনের নাম পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সঞ্জয়বাবু। প্রতারণার শিকার যুবক রাজগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ধৃত তিন জনকে রাজগঞ্জ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় বনদফতর।
বৃহস্পতিবার তাদের জলপাইগুড়ি মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে তোলা হয়। পুলিশ ১৪ দিনের জন্য তাদের হেফাজত চায়। বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন। রাজগঞ্জ থানার ওসি তমাল দাস জানিয়েছেন, ধৃতরা কতজনকে এরকম প্রতারণার শিকার করেছেন তা জানতে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ চলবে। এই চক্রে আর কারা কারা জড়িত তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy