প্রতীকী ছবি।
ফেসবুকে মন্তব্য করে, পোস্ট দিয়ে গ্রেফতার হলেন এক কলেজের ছাত্র সহ তিন জন। সোমবার রাত দু’টো নাগাদ ভক্তিনগর থানার লোয়ার ভানুনগর এলাকা থেকে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিন তাঁদের জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয়েছিল। কলেজের তরফেও মঙ্গলবার ওই ছাত্রকে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। যদিও এ দিন তিন জনকে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে ৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সরকারি আইনজীবী মৃন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই মামলা দায়ের করেছে। আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে ভয় দেখানো, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে বেনামে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম পায়েল বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই দিনই পেশ করার সময় পুলিশকে কেস ডায়েরিও দিতে বলেছেন।
পুলিশ জানায়, লোয়ার ভানুনগর এলাকার বাসিন্দা তথা সূর্যসেন কলেজের ছাত্র প্রজেনজিৎ আচার্য, তাঁর আরও দুই বন্ধু অসিত মোদক এবং আকাশ দাস সোমবার রাতে খেলাচ্ছলে একটি ভিডিয়ো তৈরি করেন। একজন ক্যামেরা ধরে, অন্য দু’জন, তাতে অভিনয় করে পরে তা নিজেদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে ছাড়ে। পরে সেখান থেকেই তা ফেসবুকে তা ভাইরাল পড়লে রাতে বিক্ষোভ শুরু হয় লোয়ার ভানুনগর থানা এলাকায়। পরে পুলিশ গিয়ে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। ডিসি পূর্ব গৌরব লাল জানান, ওই তিন যুবক নিজেরা অভিনয় করে একটি ভিডিয়ো তৈরি করে ফেসবুকে ছেড়ে দেখতে গিয়েছিল, কী ফল হয়। কিন্তু স্থানীয়দের বিক্ষোভের পর তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, এ ভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যেভাবে রোজ মিছিল সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সেখানে এরকম নিছক ছেলেখেলা একেবারেই বরদাস্ত করা যাবে না।
সোমবার রাতে ওই তিন জনের পোস্টটি ভাইরাল হয়। ধৃতেরা গ্রেফতারের পরে দাবি করেছেন, তাঁরা ভুল করে এমনটা করে ফেলেছেন। সত্যি তাঁরা ভারত বিরোধিতা করতে চাননি। নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ইয়ার্কির ছলে তা পোস্ট করেছিলেন। তা কোনওভাবে অন্যত্র চলে গিয়ে ভাইরাল হয়ে যায়।
বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন প্রসেনজিতের কলেজ, সূর্যসেন কলেজ। অধ্যক্ষ প্রণবকুমার মিশ্র জানান, ‘‘কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র কলেজের পোশাকে আর একটি নামের অ্যাকাউন্ট থেকে দেশ বিরোধী পোস্ট করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। কাল আমরা কলেজে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক ডেকেছি। সেখানে তাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আলোচনা হবে। পরে তা কলেজের পরিচালন সমিতির কাছে পেশ করা হবে।’’
শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের কাছে এই ঘটনা রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে। অনেকেই বলছেন, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কে কেউ কোনও মন্তব্য করলে তা আর সেখানেই থেমে থাকছে না। তা নেমে আসছে রাস্তায়। উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে অনেককেই। শিলিগুড়ির অরবিন্দপল্লির বাসিন্দা এক তরুণী উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনি সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট করার পরে খুবই গোলমাল শুরু হয়ে যায়। তাঁর বাডিতেও হামলা হয়েছে। বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত যারা এই সব ঘটনায় যুক্ত বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের অনেকেই ছাত্র বা ছাত্রী। এই ব্যাপারে তাই সচেতনতা তৈরি করা দরকার বলে মনে করছেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা থেকে যায়। বাড়ির অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। আবার আরও কিছু বাসিন্দার কথায়, যাঁরা লিখছেন, তাঁরা সাবালক ও সাবালিকা। তাই তাঁদের এ ভাবে মানা করা যায় কি না, তা নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy