ছেলেধরা সন্দেহে ফের গণপিটুনির ঘটনা আলিপুরদুয়ার জেলায়। এ বার ঘটনাটি ঘটল মাদারিহাট-ফালাকাটা রাজ্য সড়কের শালা মণ্ডল এলাকায়। সেখানে রান্নার গ্যাসের আভেন সারাইয়ের কাজে আসা পূর্ব মেদিনীপুরের তিন যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে ধরে স্থানীয়রা গণপিটুনি দেয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে মাদারিহাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছেলেধরা গুজব জাঁকিয়ে বসেছে। অভিযোগ, এই গুজবের জেরে ঘটছে একের পর গণপিটুনির ঘটনা। জুনের মাঝামাঝি আলিপুরদুয়ার শহরের কাছে পাটকাপাড়া চা বাগানে এমন ঘটনার সূত্রপাত। এর পর কখনও কালচিনির রায়মাটাং, তো কখনও ওই ব্লকের দলসিংহপাড়া বা আলিপুরদুয়ার জংশনের মাঝেরডাবরি বাগানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। গত সোমবার তো আলিপুরদুয়ার জংশনের ভোলারডাবরি ও বীরপাড়ার দলগাঁও স্টেশনে ছেলেধরা সন্দেহে একই ব্যক্তিকে দু’বার গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ বার গণপিটুনির ঘটনায় নতুন এলাকা হিসেবে জুড়ে গেল মাদারিহাটের শালামণ্ডল এলাকার নাম।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্নার গ্যাসের আভেন সারাইয়ের কাজ করতে এ দিন মধ্য মাদারিহাট এলাকায় যান পূর্ব মেদিনীপুরের ছয় যুবক।
১৬ জুন: পাটকাপাড়ায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি কবিরাজি ওষুধের ব্যবসায়ী এক বৃদ্ধকে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ।
২১ জুন: আলিপুরদুয়ার শহরের পলাশবাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়া যুবককে গণপিটুনি।
২৩ জুন: ছেলেধরা সন্দেহে কালচিনির রায়মাটাংয়ে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি।
৮ জুলাই: ছেলেধরা সন্দেহে কালচিনির দলসিংহপাড়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে গণপিটুনি। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ।
১৩ জুলাই: ছেলেধরা সন্দেহে আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি চা বাগানে মানসিক
ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে গণপিটুনি। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ফের আক্রান্ত পুলিশ।
২১ জুলাই: ছেলেধরা সন্দেহে আলিপুরদুয়ার জংশনের বাদলনগরে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে গণপিটুনি।
২২ জুলাই: ছেলেধরা সন্দেহে আলিপুরদুয়ার জংশনের ভোলারডাবরি ও বীরপাড়ার দলগাঁও স্টেশনে একই ব্যক্তিকে দু’বার গণপিটুনি। দলগাঁও স্টেশনের ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ওই ব্যক্তিরই ছেলে।
২৩ জুলাই: জিতি চা বাগানে মূক-বধির তরুণীকে গণপিটুনি।
২৪ জুলাই: মাদারিহাটের শালামণ্ডলে আভেন মিস্ত্রিদের ছেলেধরা সন্দেহে মার।
একটি মারুতি ভ্যানে করে সেখানে গিয়েছিলেন। সঙ্গে গাড়ির চালকও ছিলেন। সূত্রের খবর, আচমকাই তাঁদের দেখে ছেলেধরা বলে সন্দেহ করতে শুরু করেন স্থানীয়রা। কয়েক জন চিৎকারও শুরু করে দেন। বেগতিক বুঝে তাঁরা গাড়ি নিয়ে পালাতে যান। শালামণ্ডল চৌপথীতে তাঁদের গাড়ি আটকে দেয় জনতা। বাকিরা পালাতে সক্ষম হলেও তিন জনকে ধরে শুরু হয় গণপিটুনি। ভাঙচুর করা হয় গাড়িটিও। খবর পেয়ে মাদারিহাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মারমুখী জনতার হাত থেকে বহু কষ্টে ওই তিন জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির ঘটনা রুখতে জেলা জুড়ে প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ। বিডিও অফিসগুলিকেও এই প্রচারে শামিল হতে বলেছে প্রশাসন। তার পরও এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকায় চিন্তা বাড়ছে পুলিশমহলে। জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এ দিনের মাদারিহাটের ঘটনাটি নিয়ে একটি মামলা রুজু করা হচ্ছে। মারধরের ঘটনায় জড়িতদের পাশাপাশি ওই সাত যুবক ছেলেধরা বলে যে বা যাঁরা গুজব ছড়িয়েছিলেন, তাঁদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy