Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গণেশ পুজোয় এগিয়ে তৃণমূল

দিনের শেষে অবশ্য পুজো উদ্বোধনের পরিসংখ্যানে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। পর্যটনমন্ত্রী থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অথবা এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান—পুজো কমিটিগুলির অনুরোধে না বলেননি কেউই।

সম্প্রীতি:  ঘুঘুমারিতে পুজোর উদ্বোধনে মন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

সম্প্রীতি: ঘুঘুমারিতে পুজোর উদ্বোধনে মন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

কতগুলি মণ্ডপের উদ্বোধন করল ‘ওরা’? ‘আমাদের’ নেতারা ক’টা পুজোর আমন্ত্রণ পেল? শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার গণপতি উৎসব নিয়ে এমনই হিসেব চলল তৃণমূল-বিজেপির অন্দরে।

দিনের শেষে অবশ্য পুজো উদ্বোধনের পরিসংখ্যানে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। পর্যটনমন্ত্রী থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অথবা এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান—পুজো কমিটিগুলির অনুরোধে না বলেননি কেউই। শাসক দলের কোনও নেতা আবার এ বছরই পুজো আয়োজনে সামিল হয়েছেন, কেউ বা কোনও নামকরা পুজো কমিটিতে ভিড়িয়ে দিয়েছেন নিজের কোনও অনুগামীকে।

সংখ্যার নিরিখে কোচবিহারের গণেশ মণ্ডপ উদ্বোধনে এগিয়ে তৃণমূল। এ দিন শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পুজো উদ্বোধন করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি শহরের বাদুরবগানে এফবি ইউনিটের পুজো উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া, হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের উদ্যোগে প্রথমবার গণেশ পুজোতে নামা ঘুঘুমারি বাজার গণেশ পুজো কমিটির উদ্বোধনও করেন তিনি। দিনভর মোট পাঁচটি পুজোর উদ্বোধন করেছেন তিনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “অনেকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমি সব জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছি।” বিজেপি নেতারা কোনও মণ্ডপের উদ্বোধন করছেন এমন ছবি অবশ্য কোচবিহারে দেখা যায়নি। তবে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। উদ্বোধনে না হলেও পরে মণ্ডপে গিয়েছেন। মন্ত্রী রবিবাবুর উদ্বোধন করা একটি পুজোতে ডাক পেয়েছেন বিজেপি জেলা সভাপতিও। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “বাদুরবাগানে একটি পুজো কমিটি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানে গিয়েছি।’’

শিলিগুড়িতে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব উদ্বোধন করেছেন চারটি পুজোর। পুজো উদ্বোধনে সামিল হতে গত বৃহস্পতিবার দিনভর গুরুত্বপূর্ণ অন্য কোনও কর্মসূচি রাখেননি গৌতমবাবু। কোচবিহারের মতো শিলিগুড়িতেও বিজেপি নেতারা উদ্বোধনে ডাক না পেলেও, ঠাকুর আনার শোভাযাত্রা, প্রসাদ বিলিতে সামিল হয়ে পাল্লা দিতে চেয়েছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি প্রবীণ অগ্রবাল বলেন, ‘‘বেশ কিছু পুজো কমিটির থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছি। সেখানে যাচ্ছি।’’

শহরের খালপাড়া-নয়াবাজার, সমরনগর, চম্পাসারি, জংশন এলাকার ৪টি পুজোর সঙ্গে বিজেপির স্থানীয় নেতারা সরাসরি জড়িত। আবার, আশ্রমপাড়ার একটি পুজোর উদ্যোক্তা হলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর। বিধান মার্কেটের ডুয়ার্স বাসস্ট্যান্ডের দীর্ঘ দিনে পুজোর সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনই জড়িত। নতুন করে কয়েক বছর ধরে তিন বাতি মোড়ে চালু হয়েছে গণেশের আরাধনা। এখানেই তৃণমূলের নেতারা পুজোয় জডিত। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে পরপর পুজোগুলির উদ্বোধন করেছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব।

আলিপুরদুয়ার শহরে নিউটাউনের উদ্বোধন করেছেন তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। বন্যায় মালদহের গণেশ পুজোর আয়োজন কিছুটা ম্লান। তবে ইংরেজবাজার শহরে পুজোগুলিতে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরই। বিকেল থেকে কানিমোড়, সুকান্ত মোড় ও দুর্গাবাড়ি মোড়ের তিনটি বড় মাপের পুজোর উদ্বোধন করেন পুরপ্রধান বিধায়ক নীহার রঞ্জন ঘোষ। বিজেপির নেতাদের তেমন দেখা যায়নি।

অন্য দিকে, সাতসকালেই মণ্ডপের সামনে কলাগাছ পুঁতে দিতে হাত লাগালেন আলমগির হোসেন। একই ভাবে পুজো প্রস্তুতির অন্য কাজে হাত মেলালেন সঞ্জীব রাজভর, শঙ্কর রাজভর, গৌতম দত্ত,কার্তিক বিশ্বাস, রফিকুল ইসলামরা। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্ত দায়িত্ব সামলালেন দুই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে গণেশ পুজোকে কেন্দ্র করে সম্প্রীতির এক অন্য ছবি দেখলেন কোচবিহারের ঘুঘুমারির বাসিন্দারা। সৌজন্যে ঘুঘুমারি গণেশ চতুর্থি উৎসব কমিটি। প্রথম বছরই যাদের আয়োজন বাজিমাত করল।

পুজো আয়োজনের ওই সম্প্রতির ছবিই সাড়া ফেলেছে। চলছে আলোচনা। শুক্রবার ওই পুজোর উদ্বোধন করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করেছেন তিনিও। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “কোচবিহার জুড়ে এবার গণেশ পুজোর প্রভাব বেশি। ঘুঘুমারি চৌরাস্তায় যে পুজো হচ্ছে সেটা হিন্দু, মুসলিম সবাই মিলে করছেন। সম্পাদক একজন মুসলিম ছেলে। এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা দৃষ্টান্ত। এজন্য সবাইকে স্যালুট করছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE