বিজেপি যাতে কোনও মতে অন্য কোনও দলের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করতে না-পারে, সে জন্য এক নির্দলকে তো দলে টানা হয়েছেই, এ বার কংগ্রেস থেকে দুজন ও বিজেপি থেকে অন্তত একজনকে দলে টানতে মরিয়া তৃণমূল। মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে এমনই পরিস্থিতি।
এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৩ আসনের এই পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু রয়েছে। তৃণমূল ৫টি, বিজেপি ৪টি, কংগ্রেস ৩টি ও নির্দল প্রার্থী একজন জিতেছেন। পঞ্চায়েত দখলে তৃণমূলের চেষ্টা আঁচ করতে পেরে বিজেপি তাদের জয়ী সদস্যদের আগেভাগেই পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে তারা কাজ হাসিল করে রেখেছে। বোর্ড গড়তে নূন্যতম যে সাতজন লাগবে, তাঁদের তারা এখনই গোপন ডেরায় রেখে দিয়েছে।
বীরনগর বাদে কালিয়াচক ৩ ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে শাসকদলের দখলে আসা দুটি বাদে বাকি ১২টিই ত্রিশঙ্কু। সেগুলিকেও কব্জা করতে বিরোধীদের কাউকে পদের টোপ, কাউকে আর্থিক প্রলোভন, কাউকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি বা কাউকে বাগে আনতে ঠিকাদারদের পর্যন্ত নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। জেলায় ত্রিশঙ্কু থাকা মোট ৬৩টি পঞ্চায়েত ও তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি সবক্ষেত্রেই শাসকদল একই পন্থা অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা দল ভাঙানোর রাজনীতি করি না। কোনও টোপ নয়, রাজ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে শামিল হতে বিরোধী দলের অনেকেই আমাদের দলে আসতে যোগাযোগ করছেন। দলে ঢুকতে চেয়ে আবেদন করা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া করে তবেই বিরোধীরা আসছে।’’
মালদহ জেলায় ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত। তৃণমূল দখল করেছে ৫৮টি, বিজেপি ২১টি, কংগ্রেস ৪টি ও ত্রিশঙ্কু হয়েছে ৬৩টি। একমাত্র কালিয়াচক ১ ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া বাকি ১৪টি ব্লকেরই একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে ত্রিশঙ্কু অবস্থা। জেলায় হরিশ্চন্দ্রপুর ১, মানিকচক ও পুরাতন মালদহ এই তিনটি পঞ্চায়েত সমিতিরও ফলাফল ত্রিশঙ্কু। জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম নূর বলেন, ‘‘মালদহে তৃণমূল নানা কৌশলে দল ভাঙানোর খেলা খেলছে।’’ তৃণমূলের মালদহ জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী জেলায় সভা করে ত্রিশঙ্কু থাকা সমস্ত পঞ্চায়েত দখলের ডাক দিয়েছেন মাস খানেক আগেই। বিরোধীদের অভিযোগ সেই মতো ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূলের সূত্রই জানাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে নির্দল যাঁরা জিতেছেন তাঁরা অধিকাংশ বকলমে তাদেরই বিক্ষুব্ধ প্রার্থী। দলে তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রামে সম্প্রতি সভা করে নির্দল পাঁচ জনকে নেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের এক জেলা নেতা জানান, বিরোধীদের তাঁরা বোঝাচ্ছেন উন্নয়ন কাজ করতে গেলে সরকারি আনুগত্য দরকার। তাতে বিরোধীরা নিজেরাই আসছেন। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শাসকদলের দল ভাঙানো খেলা বন্ধ করতে আমাদের জয়ী দলীয় প্রার্থীদের ভিন রাজ্যে রাখতে হয়েছে। তবুও এ গেল, ও গেল বলে এলাকায় গুজব রটিয়ে তৃণমূল দলীয় সদস্যদের ভাঙানোর কৌশল করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy