Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জমি উদ্ধারে ‘টাস্ক’ দিচ্ছেন সভাপতি

জেলা নেতারা ‘টাস্ক’ দিচ্ছেন৷ বাধ্য ছাত্রের মতো তা পালন করছেন স্থানীয় নেতারা৷

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৩
Share: Save:

জেলা নেতারা ‘টাস্ক’ দিচ্ছেন৷ বাধ্য ছাত্রের মতো তা পালন করছেন স্থানীয় নেতারা৷

পঞ্চায়েত নির্বাচনের ‘ভুল’কে লোকসভা নির্বাচনে সংশোধন করতে কুমারগ্রামে এবার এই ছকেই এগোতে শুরু করল আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল৷ সেই লক্ষ্যে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সরিয়ে রেখে দলের স্থানীয় নেতাদের প্রতিদিন কড়া টাস্ক দেওয়ার পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই সেখানে ছুটে গিয়ে ঘাঁটি গাড়ছেন খোদ দলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা৷ সেই সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুমারগ্রামের বেশ কিছু জায়গায় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে ওঠা প্রাক্তন কেএলও জঙ্গীদের কাছে টানতে, তাঁদের মধ্যে আরও ৪৯ জনকে চাকরি দিতেও মরিয়া তৃণমূলের জেলা নেতারা৷

এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় থেকেই কুমারগ্রামকে নিয়ে বেগ পেতে শুরু করেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতারা৷ এক দিকে অসম সীমানা লাগোয়া ওই এলাকায় বিজেপি বেশ খানিকটা শক্তি বাড়িয়ে ফেলেছিল৷ অন্য দিকে টিকিট না পেয়ে দলের নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তৃণমূলের অনেকেই নির্বাচনের সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন৷ যাঁদের কেউ কেউ আবার নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েও পড়েন৷ তবুও দলের জেলা নেতৃত্বের আশা ছিল, ওই এলাকায় ভাল ফলই করবে তৃণমূল।

কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতেই দেখা যায়, জেলার একমাত্র পঞ্চায়েত সমিতি হিসাবে কুমারগ্রামে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি৷ ওই এলাকা থেকেই জেলায় একমাত্র জেলাপরিষদের আসনেও জয় পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী৷ যে ঘটনা চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়ে দেয় তৃণমূল নেতৃত্বের কপালে৷ সেই সঙ্গে এলাকার বাসিন্দা তথা সাংসদ দশরথ তিরকি ও বিধায়ক জেমস কুজুরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই কুমারগ্রামে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ যার প্রথম ধাপ হিসাবে জেমস কুজুরকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জুলাই মাসে শিলিগুড়িতে এসে কুমারগ্রামের ২২ জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিকে চাকরির নিয়োগপত্রও দেন তিনি৷ লোকসভা নির্বাচনে কুমারগ্রামে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে আরও ৪৯ জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে চাকরি দিতে মরিয়া তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব৷ যাঁদের তালিকা ইতিমধ্যেই কলকাতায় পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে৷

সেই সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সরিয়ে রেখে দলের সব নেতাকেই এখন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামিয়ে দিতে মরিয়া দলের জেলা শীর্ষ নেতারা৷ যে কারণে, দু’-একদিন পরপরই কুমারগ্রামে গিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকছেন খোদ জেলা সভাপতি মোহন শর্মা৷ সব নেতাকে নিয়ে একসঙ্গে বসছেন তিনি৷ হারানো জমি ফিরে পেতে, সেখানেই স্থানীয় নেতাদের রাজনৈতিক টাস্ক দিচ্ছেন দিচ্ছেন তিনি৷ আর নেতারা সেই টাস্ক পালন করলেন কি না, পরের দিন কুমারগ্রামে গিয়ে তার হিসাব নিচ্ছেন তিনি৷

মোহনবাবুর কাছে আবার নিয়মিত কুমারগ্রাম নিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন দলের রাজ্য নেতারাও৷ মোহনবাবু বলেন, “আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেলার মধ্যে কুমারগ্রামে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয় পাওয়া এবং আমরা নিশ্চিত সেই লক্ষ্যে সফল হব৷”

কিন্তু মোহনবাবুর টাস্ক-এ থাকছেটা কী? তৃণমূল সূত্রের খবর, মূলত জনসংযোগকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন দলের জেলা সভাপতি৷ সে জন্য স্থানীয় নেতাদের ধরে ধরে প্রতিদিন নির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হচ্ছে৷ মানুষের সমস্যা কিংবা সেই সমাধানের উপায় মোহনবাবুর কাছে রিপোর্ট দিতে হচ্ছে তাঁদের৷ আর মানুষের সঙ্গে এই মেলামেশাই এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টে দিচ্ছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের৷

যদিও বিজেপির জেলা সাধরণ সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘কুমারগ্রামের মানুষ তৃণমূলকে একেবারে চিনে ফেলেছে৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ তার প্রমাণও দিয়েছেন৷ ফলে তৃণমূল নেতারা যতই চেষ্টা করুন না কেন, মানুষের মন ঘোরাতে পারবেন না৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mohan Sharma Alipurduar TMC Group Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE