Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

একল ঘিরে বাড়ছে বিজেপি: তৃণমূল

শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯ এ। বালুরঘাট ব্লক থেকে আজ গোটা জেলার প্রায় সর্বত্র ছড়িয়েছে তার শাখা। এই স্কুল নিয়েই চিন্তায় শাসক দলের নেতাকর্মীরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বুনিয়াদপুর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৮
Share: Save:

শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯ এ। বালুরঘাট ব্লক থেকে আজ গোটা জেলার প্রায় সর্বত্র ছড়িয়েছে তার শাখা। এই স্কুল নিয়েই চিন্তায় শাসক দলের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের একাংশের মতে, গ্রামাঞ্চলে এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির উত্থানে এই স্কুলগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও একল বিদ্যালয়ের জেলা অভিযান প্রধান দেবাশিষ শর্মারায় বলেন, ‘‘গরিব, পিছিয়ে থাকা সমাজের ছেলেমেয়েরা যাতে উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্যই এই স্কুল। এখানে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হয়। পঠন-পাঠনের পাশাপাশি শিশুদের চরিত্র বিকাশের জন্য বৌদ্ধিক পাঠও দেওয়া হয়। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’

সূত্রের খবর, আদিবাসী জনজাতিভুক্ত ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিতে ‘বনবন্ধু পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। আরএসএসের একটি শাখা সংগঠন নামেই এই পরিষদটি পরিচিত। আদিবাসী এলাকায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য এই পরিষদ অর্থে তৈরি হয় ছোট ছোট স্কুল। স্কুলে আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের গরিব পড়ুয়ারাও শিক্ষা লাভ করতে পারে। মাত্র ৬৫০ টাকা মাসিক ভাতার বিনিময়ে এক দল আচার্য এই শিক্ষা দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৯৯ -এ বালুরঘাট কেন্দ্রীক ৯০ টি এই একল বিদ্যালয় চালু হলেও ধীরে ধীরে এই বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। পরে জেলার ফুলবাড়ি ও তপন ব্লকে আরও বিদ্যালয় তৈরি হয়। ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনের পর এই বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে হুহু করে। এখন জেলার বালুরঘাট, হিলি ও কুমারগঞ্জ মিলে ১২০ টি একল বিদ্যালয় রয়েছে। শুধু তপন ব্লকেই আছে ৯০ টি। গঙ্গারামপুর ও বংশীহারি ব্লক মিলিয়ে একলের সংখ্যা ১২০ টি। সব মিলিয়ে জেলায় এখন ৩৩০ টি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২০ জন করে ছাত্রছাত্রী আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার ছাত্রছাত্রী এই বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত পড়াশুনা করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরই মূলত এখানে পড়ানো হয়। প্রাথমিকের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি একল বিদ্যালয়ের তরফেও মহাপুরুষের জীবনী, রামায়ণ, মহাভারতের গল্প, সরস্বতী বন্দনা, বিভিন্ন সংস্কৃত শ্লোকও পড়ানো হয়। এ ভাবে, বৈদিক যুগের গুরুকুলের অনুকরণে বিদ্যালয়গুলি চলছে বলে খবর। বিদ্যালয়গুলির আচার্যদের কথায়, ‘‘বিদ্যালয়ে হিন্দু সংস্কৃতি, তার রীতি-নীতি, কৃষ্টিও শেখানো হয়।’’

এ দিকে এই বিদ্যালয়গুলির মাধ্যমে হিন্দুত্ব ভাবধারার প্রচার করায়, শাসক দল অশনি সংকেত দেখছে বলে সূত্রের খবর। তৃণমূল নেতাদের কথায়, ‘‘বিনা পয়সায় গরিব ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোয় স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে পড়ুয়া বাড়ছে। বাড়ছে স্কুলের সংখ্যাও। আর এর আড়ালেই চলছে উগ্র হিন্দুত্বের প্রচার।’’

কিন্তু এই বিদ্যালয়গুলি বন্ধ করার উপায় নেই দেখে শাসক দল সব বুঝেও নিরুপায়। আর এ ভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপির প্রভাব বাড়ছে—তা মানছে তৃণমূল শিবির। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘বিজেপির বাড়বাড়ন্তের পেছনে এই স্কুলগুলির কিছুটা প্রভাব তো রয়েইছে। স্কুলের আড়ালে কোনও উগ্র মতবাদ ছড়ানো বা টাকা পয়সা দেওয়া হচ্ছে কিনা- তা নজরে রাখা হচ্ছে।’’ এই অবস্থায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে শাসকদলকে চিন্তায় রেখেছে আরএসএসের এই বিদ্যালয়গুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ekal Vidyalaya Hinduism TMC BJP Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE