একে তো লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে হার। তার উপরে দীর্ঘদিন ধরে ব্লকের একাংশ নেতাদের বিরুদ্ধে জমি থেকে চাকরি— নানা দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার দল। এতে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শক্ত ঘাঁটির ব্লকেই বিজেপির থেকে ১৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। শেষ অবধি এবার দলের নকশালবাড়ির ব্লকের ওই নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন জেলা নেতৃত্ব। শুক্রবার কলকাতা থেকে ফিরে সন্ধ্যায় নকশালবাড়িতে দলীয় দফতরে বৈঠক করেছেন জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব। দলীয় সূত্রের খবর, বৈঠকে সমস্ত স্তরের নেতাদের সংযত, সর্তক করার পাশাপাশি অঞ্চল থেকে ব্লক স্তর অবধি রদবদলের ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন তিনি। তাতে নকশালবাড়ির প্রধান থেকে ব্লক সভাপতি, সব পদেই রদবদল করা হতে পারে বলে নেতাকর্মীদের বড় অংশ মনে করছে। পুরনোদের মূল স্রোতে টানার ইঙ্গিত দিয়ে এই বৈঠকে তাঁদের অনেককেই ডেকেছিলেন গৌতম।
গৌতম বলেন, ‘‘আমাদের এখনই দলের সংশোধনের পথে হাঁটতে হবে। বহু অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। ভেবেছিলাম অনেকে সতর্ক, সংযত হয়ে নিজেকে বদলাবেন। কিন্তু তার আর সময় নেই। দলীয় স্তরে শুদ্ধকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে ব্লক স্তর অবধি রদবদল করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। যে মুখগুলি নকশালবাড়ির মানুষ পছন্দ করছেন না, তাঁদের তো সরতেই হবে।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেও নকশালবাড়ি কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। পরের দু-তিন বছরে কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি থেকে একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি তৃণমূলে যোগ দেন। মণিরাম, হাতিঘিসা, নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও তরাইয়ের চা বাগানে দলের মজবুত সংগঠন গড়ে ওঠে। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে এলাকার নেতাদের একটি অংশের বিরুদ্ধে জমির কারবার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে প্রথমে দল বিড়ম্বনায় পড়ে। ব্লকের এক নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ এনে এক শিল্পপতি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নালিশ জানান। থানায় একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে।
এর সঙ্গে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক বাসিন্দার কাছ থেকে এক নেতা ৫ লক্ষ টাকা নেন বলে অভিযোগ ওঠে। তেমনিই, রেশনের মালপত্র নিয়ে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে ছাড়াতে টাকা নিয়ে পুলিশকে প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে এক শ্রমিক নেতা এবং এক প্রধানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি গরু চুরির মামলায় এক নেতার আত্মীয়ের নাম জড়ায়। পুলিশের তরফেও রিপোর্ট জমা পড়ে। সেই সঙ্গে ভুয়ো নথি তৈরি করে একাধিক জমি দখলের অভিযোগও সামনে আসে। এর অধিকাংশ অভিযোগ জেলা সভাপতির কাছেও পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় চা শ্রমিক নেতাদের মঞ্চে উঠতে না দেওয়া নিয়েও দলে ক্ষোভ ছড়ায়। এই পরিস্থিতিতে শুদ্ধকরণে আর অপেক্ষা করতে চাইছেন না জেলা নেতৃত্ব। বিশেষ করে, ব্লক এবং চা বাগান জুড়ে বিজেপি দলবদলে সক্রিয় হয়ে ওঠায় তৃণমূল নেতৃত্ব ব্যবস্থার পথে হাঁটতে চাইছেন। দলের ব্লক স্তরের এক প্রবীণ নেতা জানান, জেলা সভাপতি সম্প্রতি চার দফায় নকশাবাড়িতে বৈঠক করেছেন। পুরনোদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। যে মুখগুলি এই ব্লকের মানুষ আর পছন্দ করছেন না, তাঁদের সরানো দরকার। তাতে দল দুর্বল নয়, মজবুতই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy