Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আহত তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু

গোষ্ঠী সংঘর্ষে জখম এক তৃণমূলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে মাথাভাঙার কুর্শামারিতে। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ওই তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম পহরুদ্দিন আকন্দ (৫৬)। বাড়ি কুর্শামারিতেই। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল বলে অভিযোগ।

ছেলেকে শেষ দেখা বৃদ্ধা মায়ের। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ছেলেকে শেষ দেখা বৃদ্ধা মায়ের। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

গোষ্ঠী সংঘর্ষে জখম এক তৃণমূলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে মাথাভাঙার কুর্শামারিতে। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ওই তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম পহরুদ্দিন আকন্দ (৫৬)। বাড়ি কুর্শামারিতেই। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। নার্সিংহোমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন পহরুদ্দিনের বৃদ্ধা মা মহিজা বেওয়া, তাঁর ছেলে মোতালেব, মনিররা। কাঁদতে কাঁদতে মহিজা বলেন, “কেন রাজনীতি করতে গেলি বাবা। যারা এমন ভাবে আমার ছেলেকে মারল তাদের শাস্তি চাই।”

মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৃণমূলকর্মীরা কুর্শামারি বাজারে জড়ো হতে শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের টহলদারি শুরু হয়। অস্থায়ী ভাবে একটি পুলিশ ক্যাম্পও বসানো হয়েছে সেখানে। বুধবার ওই এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তৃণমূলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তিনি বলেন, “ফের যাতে কোনওরকম গণ্ডগোল না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার একশো দিনের কাজের টাকা সহ একাধিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দোষারোপ নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তেতে ওঠে কুর্শামারি। দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১২ জন জখম হন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পহরুদ্দিন আকন্দ সহ ৩ জনকে কোচবিহারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই ৩ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল তৃণমূল নেতৃত্ব কুর্শামারি অঞ্চল সভাপতি জুলজুলাল মিয়াঁ সহ ৫ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করে। জুলজুলাল শীতলখুচির বিধায়ক হিতেন বর্মনের ঘনিষ্ঠ বলে দলীয় সূত্রের খবর। হিতেনবাবু অবশ্য এদিন বলেন, “খুব দুঃখজনক ঘটনা। গণ্ডগোলের পরেই জুলজুলাল সহ ৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে দিকে নজর রাখা হবে।” নিহত তৃণমূলকর্মী মাথাভাঙার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য নজরুল হকের গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এবং জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে নজরুল হকের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু এদিন বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে কিছু নেই। যাঁরা অন্যায় করেছেন তাঁদের রেয়াত করা হবে না। এর আগেই পাঁচ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আইন আইনের পথেই চলবে।”

বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, সমস্ত জায়গাতেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূল নেতারা। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকেও নানা উপায়ে সরকারি টাকা তছরুপ করছে তাঁরা। ওই টাকার বখরা নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বাঁধছে। কুর্শামারিতেও তেমনই অভিযোগ উঠে এসেছে। নজরুল হক গোষ্ঠীর অভিযোগ, কুর্শামারিতে তৃণমূলের বহিষ্কৃত অঞ্চল সভাপতি গ্রাম পঞ্চায়েতে ঢুকে অন্যায় ভাবে নানা কাজ করাতে চাইতেন। ১০০ দিনের কাজে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করলে জোর করে ১৫০ জনের নামে কাজ দেখিয়ে পঞ্চায়েত সদস্যের মাধ্যমে টাকা তুলে নিতেন তিনি। জুলজুলালের পাল্টা অভিযোগ, রাস্তা তৈরি সহ নানা কাজে বরাদ্দ টাকা নয়ছয় করছে নজরুল হক গোষ্ঠীর লোকজন। দুটি রাস্তা তৈরির নাম করে ২৭ লক্ষ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। তা নিয়ে প্রতিবাদ করাতেই তার উপরে চড়াও হয়েছে ওই গোষ্ঠী। এদিন জুলজুলাল মিয়াঁর মোবাইল সুইচড অফ থাকায় তাঁকে ধরা যায়নি। অভিযোগ, ওই দিন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বজলে রহমানের বাড়ি থেকে সন্ধ্যের সময় ইফতার করে ফিরছিলেন পহরুদ্দিনরা। সে সময় তাঁদের উপরে আচমকা ঝাপিয়ে পড়ে জুলজুলালের গোষ্ঠী। রাতেই পহরুদ্দিন সহ ৩ জনকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। জুলজুলাল তখন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছিলেন, হামলা তাঁদের উপরেই করা হয়েছিল। তাঁরা তা রোখার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি হয়। তাতেই কয়েকজন জখম হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar Trinamool police camp group clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE