Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

চার নাবালিকার বিয়ে রুখেও চিন্তায় ব্লক প্রশাসন

মালদহে শনিবার অভিযান চালিয়ে দুই নাবালিকার বিয়ে আটকেছিল পুলিশ প্রশাসন। সেই রাতেই দক্ষিণ দিনাজপুরের তিনটি ব্লকে চার-চারটি নাবালিকা বিয়ে রুখে দিল প্রশাসন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৬
Share: Save:

মালদহে শনিবার অভিযান চালিয়ে দুই নাবালিকার বিয়ে আটকেছিল পুলিশ প্রশাসন। সেই রাতেই দক্ষিণ দিনাজপুরের তিনটি ব্লকে চার-চারটি নাবালিকা বিয়ে রুখে দিল প্রশাসন। কিন্তু দিনের পর দিন সচেতনতা প্রচার ও অভিযান চালিয়েও নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ায় অস্বস্তিতে এই জেলার প্রশাসনিক কর্তারা।

শনিবার রাতে বালুরঘাটে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ভুল বুঝিয়ে স্থানীয় এক মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। একই ভাবে তপন ব্লকের একটি এলাকায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। পুলিশ হানা দিলে পাত্রপক্ষ পালিয়ে যায়। ওই ব্লকেরই অন্য একটি এলাকায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে আটকে তাকে চাইল্ডলাইনের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। রাতে কুমারগঞ্জে পুলিশ এক একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে আটকেছে। সেখানে দশম শ্রেণির ছাত্রীর অমতে তার বিয়ে হচ্ছিল। কুমারগঞ্জের বিডিও দেবদত্ত চক্রবর্তী, বালুরঘাট থানার আইসি জয়ন্ত দত্ত, পিএলভি মিজানুর রহমান এবং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য সুরজ দাসেরা গোপনে খবর পেয়ে ওই চার নাবালিকার বিয়ে আটকাতে সক্ষম হন।

কুমারগঞ্জের বিডিওর কথায়, বাল্যবিয়ে রোধে ব্লক জুড়ে সকলকে সচেতন করার পরেও ওই প্রবণতা সম্পূর্ণভাবে রোধ করা যাচ্ছে না। জেলায় বছরের পর বছর বাল্যবিবাহ বেড়ে চলায় চিন্তায় পুলিশ ও প্রশাসন। বালুরঘাটে চাইল্ডলাইনের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে অক্টোবর পর্যন্ত জেলার আটটি ব্লকে ২১০ জন নাবালিকার বিয়ে আটকানো গিয়েছে। গত বছর আটকানো হয়েছিল ১৭০ জনের বিয়ে। ২০১৬ সালে সংখ্যাটি ১৯৩ জন। ২০১৫ সালে ১৭৮ জনের। প্রশাসনের বক্তব্য, এছাড়া পুলিশ-প্রশাসনকে এড়িয়ে গোপনে বহু নাবালিকার বিয়ে হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় ব্যক্তিদের পাশাপাশি অনেক দরিদ্র অভিভাবকদের মোটা টাকার টোপ দিয়ে ভিনরাজ্য থেকে এসে নাবালিকা বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ার একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। একাধিক ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এই জেলা থেকে বছরে যতগুলি নাবালিকা বিয়ে রোধ হয়, তার ৪০ শতাংশেরই পরে গোপনে ফের নাবালিকা অবস্থাতেই বিয়ে হয়।

কিন্তু কেন কমছে না নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা? চাইল্ড ম্যারেজ আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয় না বলেই ওই প্রবণতা কমছে না বলে অনেক আইনি বিশেষজ্ঞদের দাবি। আইন অনুযায়ী নাবালিকা বিয়ের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত অভিভাবকদের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই জেলায় গত এক বছরে মাত্র ১০টি মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু দুঃস্থ বাবা-মায়ের কথা ভেবে এবং স্থানীয় নেতাদের চাপে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরে পুলিশ কিংবা ব্লক প্রশাসন থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই অভিযোগ।

সম্প্রতি কুমারগঞ্জে সাফানগরে এক দশম শ্রেণীর ছাত্রীর বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। ছাত্রীটি থানায় গিয়ে বিয়ে বন্ধের আর্জি জানালে হইচই পড়ে যায়। স্কুলের সহায়তায় ছাত্রীটি অবশ্য এখনও

পড়াশোনা করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Block administrative Teenage Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE