Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গুলির পরে বোমা, ক্ষুব্ধ দিনহাটা

কোথাও গুলিবিদ্ধ যুবক। কোথাও বোমার আঘাতে জখম ৪ শিশু। কারও কারও কানের কাছ দিয়ে পরপর গুলি বেরিয়ে গিয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে।

আহত: বোমায় জখম শিশু। নিজস্ব চিত্র

আহত: বোমায় জখম শিশু। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৪১
Share: Save:

কোথাও গুলিবিদ্ধ যুবক। কোথাও বোমার আঘাতে জখম ৪ শিশু। কারও কারও কানের কাছ দিয়ে পরপর গুলি বেরিয়ে গিয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। সব নিয়ে যেন সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে দিনহাটা তথা কোচবিহার। ঠিক এই সময়েই শুক্রবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সভায় কড়া ভাষাতেই মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, কারা কারা আগ্নেয়াস্ত্র রাখছে তাদের নাম পুলিশকে জানিয়ে দিতে। শুধু পুলিশ নয়, দলের নেতা-কর্মীদেরও সেই বিষয়ে নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার আগেও গত ২৯ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে এসে প্রশাসনিক বৈঠকে দিনহাটা থানার আইসি সঞ্জয় দত্তকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। পরে জেলা পুলিশ কর্তাদেরও পদক্ষেপ করার কথা জানান।

তার পরেও যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, তার প্রমাণ মিলল পরপর দু’দিন। বৃহস্পতিবার সাহেবগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তৃণমূলের এক কর্মী। শুক্রবার দিনহাটার গোসানিমারি বন্দর থেকে একটু ভিতরের দিকে ভিতরকামতা গ্রাম। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই ওই এলাকায় দলের যুব সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূলের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে ওই এলাকায় গুলি ও বোমাবাজিরও অভিযোগ ওঠে। এ দিন ওই শিশুরা আরমানের কাকা সাবির হোসেনের ধানিজমিতে ক্রিকেট খেলতে শুরু করে। খেলার সময় ক্রিকেট বল পাশের ধান খেতে যায়। শিশুরা বল আনতে যায়। সেখানেই পড়ে থাকা বলের মতো দেখতে একটি বোমাকে ওঠাতে গেলেই সেটি ফেটে যায়। বোমার শব্দে এবং শিশুদের চিৎকারে ছুটে আসে আশপাশের লোকজন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকলেই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া।

ঘটনার পরে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের কয়েকজন বলেন, কারা কী নিয়ে গণ্ডগোল করবে, বোমা-গুলি ছুড়বে তার ফল শিশুরা ভুগবে কেন? পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তৃণমূলের গোসানিমারি অঞ্চল সভাপতি রাখাল রায় বলেন, “গত কিছু দিন ধরে দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি করেছে। পুলিশ কড়া হাতে ব্যবস্থা নিক।”

কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে অবশ্য দাবি করেন, লাগাতার অভিযানে সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেফতারও করা হয়েছে অনেককে। তিনি বলেন, “লাগাতার অভিযান চলছে। আরও বাড়ানো হবে। যে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে অস্ত্র রেখেছেন, তাঁরা এখন ভয় পেয়ে বাইরে ফেলে দিচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে কোচবিহারে অস্ত্রের রমরমা। গুলিবিদ্ধ হয়েছে মৃত্যু হয়েছে একাধিক তৃণমূল ও যুব কর্মী। বোমার আঘাতে জখমের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে। বিরোধীদের দাবি, শাসক দলের যুব সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্বে অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু দিন আগে স্টেনগান হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের দিনহাটার বড় আটিয়াবাড়ির নেতা নরেশ বর্মণ। দিন কয়েক আগে যুব তৃণমূলের নেতা আলতাফ মিয়াঁর পাশে সেভেনএমএম পিস্তল হাতে বসে থাকতে যায় এক যুবককে। দুটো ছবি ভাইরাল হয়ে ফেসবুকে। পরে ওই যুবককে অস্ত্র সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এর বাইরে তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মী অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয়েছে।

তবে যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “এখানে দ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই। দুষ্কৃতীরা দুষ্কৃতী। তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক পুলিশ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Clash TMC TMCP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE