Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তুলকালাম

পুলিশ সূত্রের খবর, আক্রান্ত ব্যবসায়ীর নাম তাপস দে। তাঁকে কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই ওই এলাকায় যুব সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।

টহল: ফাঁকা রাস্তাঘাটে পুলিশের নজরদারি। নিজস্ব চিত্র

টহল: ফাঁকা রাস্তাঘাটে পুলিশের নজরদারি। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২৩
Share: Save:

প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে তৃণমূলের এক নেতা তাঁর দলেরই যুব সংগঠনের সদস্যদের হাতে আক্রান্ত হলেন বলে অভিযোগ উঠল কোচবিহারের দেওয়ানহাটে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দেওয়ানহাট। আক্রান্ত নেতা ব্যবসায়ী। শুক্রবার সকালে দেওয়ানহাট বাজার বন্‌ধ করে রাস্তায় নামেন ব্যবসায়ীরা। কোচবিহার-দিনহাটা সড়ক অবরোধ করে দেওয়া হয়। জিরানপুর হয়ে বলরামপুর যাওয়ার রাস্তায় বালাসিতে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধে সামিল হন তৃণমূল কর্মীরা। রাস্তায় বাঁশ বেঁধে লাঠি হাতে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তৃণমূল কর্মীদের। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে গোটা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

পাল্টা, এক যুব তৃণমূল কর্মীকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় যুব তৃণমূলের এক নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “ওই এলাকায় পুলিশ রয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, আক্রান্ত ব্যবসায়ীর নাম তাপস দে। তাঁকে কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই ওই এলাকায় যুব সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। দুই পক্ষই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে মরিয়া হয়ে ওঠে। ১৭ আসনের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের পক্ষে ছিলেন ৯ জন। যুব তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন ৮ জন। তৃণমূলের লিপিকা ভৌমিক রায় প্রধান হন। তাপসবাবু বলেন, “আমি তৃণমূল করি। প্রধান হিসেবে লিপিকা দেবীকেই চেয়েছিলাম। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে যুব তৃণমূলের কয়েকজন আমাকে মারধর করে।”

তাপসবাবুর অভিযোগ, মারধরের সময় সাত-আটজন যুবক ছিলেন। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। প্রাতঃভ্রমণে তিনি দেওয়ানহাট রেল স্টেশনে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে কয়েকজন যুবক তাঁকে কিল-চড়-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে। সেখান থেকে তাঁকে যুব তৃণমূল পার্টি অফিসে নিয়ে গিয়েও মারধর করা হয়। এক যুব তৃণমূল নেতার বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। রাস্তায় তাঁর পরিবারের লোক ও প্রতিবেশীরা প্রতিবাদ করলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লিপিকাদেবী বলেন, “অভিযুক্তরা প্রধান গঠনের পরে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। পুলিশকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।”

তাপসবাবুকে মারধরের ঘটনা চাউর হতেই ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। একাংশ ব্যবসায়ী রাস্তা অবরোধ করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। বন্ধ রাখা হয় দোকানপাট। ব্যবসায়ী সুমন দে বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত বাজার বন্‌ধ চলবে।” এই অবস্থার মধ্যে বালাসিতে তৃণমূল কর্মীরা যুব সদস্য নবী হোসেনকে রাস্তায় আটকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁর বাইক ভাঙচুর করা হয়। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দেওয়ানহাট-পানিশালা থেকে দিনহাটায় কিছু দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারাই নানা জায়গায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এরা দলের কেউ নয়। পুলিশকে সব জানিয়েছি।” যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “যুব তৃণমূল তৃণমূলেরই একটি শাখা সংগঠন। দেওয়ানহাটের ঘটনায় যুব তৃণমূলের কেউ নেই। যদি কেউ থাকে তা রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unrest Clash Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE