Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আন্দোলনে রণক্ষেত্র ডুয়ার্সকন্যা

সিপিএমের কৃষক সংগঠনের ডাকা জেল ভরো আন্দোলনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল আলিপুরদুয়ারের ডুয়ার্সকন্যা এলাকা৷ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে ৯ জন পুলিশ কর্মী-সহ ৩৫ জন জখম হন৷ জখম হয়েছেন তিন সাংবাদিকও৷

উত্তপ্ত: সিপিএমের কৃষক সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে। ছবি: নারায়ণ দে

উত্তপ্ত: সিপিএমের কৃষক সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে। ছবি: নারায়ণ দে

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০২:১৫
Share: Save:

সিপিএমের কৃষক সংগঠনের ডাকা জেল ভরো আন্দোলনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল আলিপুরদুয়ারের ডুয়ার্সকন্যা এলাকা৷ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে ৯ জন পুলিশ কর্মী-সহ ৩৫ জন জখম হন৷ জখম হয়েছেন তিন সাংবাদিকও৷ পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের দশটি সেল ছুড়তে হয় পুলিশকে৷ আন্দোলনকারীদের হঠাতে পুলিশ শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালায় বলেও অভিযোগ৷ যদিও পুলিশকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন৷ এখনও ১০২ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷

চা বাগান ধর্মঘটে এই জেলাতে মোটামুটি সাড়া মিলেছে। তারপরে এ দিনও বামেদের জেল ভরো আন্দোলনের পরে বিরোধীরা খুশি। এই কর্মসূচিতে সিপিএমের কৃষক সংগঠন ছাড়াও সিটু ও দলের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন৷ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকরা সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হন৷ দুপুর দুটো নাগাদ শুরু হয় মিছিল৷

গোলমাল এড়াতে ডুয়ার্সকন্যার সামনে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে মোতায়েন করা হয়৷ দুপুর আড়াইটা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় ডুয়ার্সকন্যার সামনে৷ আন্দোলনকারীরা দুটো ব্যারিকেড ভেঙে তৃতীয় ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশের কড়া প্রতিরোধের মধ্যে পড়তে হয় তাদের৷ তখনই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খণ্ডযুদ্ধ লেগে যায়৷

তত ক্ষণে পাথরের আঘাতে তিন মহিলা কনস্টেবল সহ নয় জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন৷ তাদের তড়িঘিড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আলিপুরদুয়ার থানার আইসি জয়দেব ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীর গায়েও ঢিল পড়ে বলে অভিযোগ৷ আনন্দবাজার পত্রিকার চিত্র সাংবাদিক নারায়ণ দে সহ তিন সাংবাদিকও পাথরের ঘায়ে জখম হন৷ কৃষকসভার জেলা সভাপতি তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ বেপরোয়া ভাবে লাঠি চালিয়েছে, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়, শূন্যে এক রাউন্ড গুলিও ছুড়েছে৷ পুলিশের লাঠির আঘাতে আমাদের ২৬ জন জখম হয়েছেন৷’’

কিন্তু কেন আচমকা এমন পরিস্থিতি তৈরি হল? জেলার পুলিশ কর্তাদের একাংশের কথায়, মিছিলের একটা বড় অংশের উপর নেতাদের কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না৷ যদিও কৃষক সভার জেলা যুগ্ম সম্পাদক কিশোর দাসের অভিযোগ, ‘‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে৷ যার ফলে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷’’ যদিও পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, আন্দোলনকারীরা ডুয়ার্সকন্যায় আসার আগেই সঙ্গে পাথর নিয়ে এসেছিল৷

আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, ডুয়ার্সকন্যা চত্বরে ১৪৪ ধারা বজায় থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা জোর করে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে৷ বাধা দিতে গেলে পুলিশকে আক্রমণ করে৷ এরপর বাধ্য হয়েই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়৷

জেল ভরো আন্দোলনে এদিন কোচবিহারেও সামিল হয় সিপিএম কর্মীরা। জেলাশাসকের দফতরের সামনে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হয়। পুলিশ কর্তারা সবাইকে গ্রেফতার করা হল ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE