Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্মার্টফোন নিয়েই ঘটি হাতে মাঠে যান গ্রামবাসী

কারণ ঘটি হাতে এই মানুষদের অনেকেই ব্যবহার করেন স্মার্ট ফোন৷ কারও কারও গলায় সোনার চেন৷ কেউ আবার মোটর সাইকেল ছাড়া নড়েন না৷ কেউ কেউ আবার নিজের বিয়েতে খরচ করে ফেলেছেন দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা৷ অথচ শৌচকর্ম করেন খোলা মাঠে৷

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পার্থ চক্রবর্তী
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ১০:৫০
Share: Save:

ভোরের আলো সবে ফুটেছে৷ বাড়ি থেকে ঘটি ভরে জল নিয়ে খোলা মাঠ বা নদীর ধারে এগোচ্ছিলেন অনেকেই৷ একটু আড়াল খুঁজে বসতে যাবেন৷ তখনই বেজে উঠল বাঁশি৷ রে রে করে ছুটে গেলেন প্রশাসনের কর্তারা৷ আর তাঁদের দেখে অস্বস্তি ও লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায় অনেকেরই৷ কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হয়ে যান প্রশাসনের কর্তারাই।

কারণ ঘটি হাতে এই মানুষদের অনেকেই ব্যবহার করেন স্মার্ট ফোন৷ কারও কারও গলায় সোনার চেন৷ কেউ আবার মোটর সাইকেল ছাড়া নড়েন না৷ কেউ কেউ আবার নিজের বিয়েতে খরচ করে ফেলেছেন দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা৷ অথচ শৌচকর্ম করেন খোলা মাঠে৷

শনিবার এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হতে হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের৷ যারা গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গোটা জলপাইগুড়িকে জেলাকে নির্মল করার৷

প্রশাসন সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি জেলার ৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৩টিকে ইতিমধ্যেই নির্মল বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ কেউ যাতে সকাল বেলায় খোলা মাঠে শৌচকর্ম করতে না যান সেজন্য জেলার সর্বত্রই চলছে প্রচার ও নজরদারি৷ তারপরও বহু জায়গায় এমন ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ৷ এই অবস্থায় গত শুক্রবার প্রশাসনের তরফে একটি নির্দেশে বলা হয় জেলার শীর্ষ আধিকারিকরা প্রতি শনিবার নির্মল কর্মসূচিকে সফল করতে নজরদারি চালাবেন৷

সেই কর্মসূচি অনুযায়ীই এ দিন ভোরে আলো ফোটার আগেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যান জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা৷ যে তালিকায় খোদ জেলাশাসক রচনা ভকত থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমা শাসক, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও বিডিও-রা সামিল হন৷

জেলাশাসক নিজে যান মাল ব্লকের রাঙামাটির সাইলি এলাকায়৷ ওই গ্রামটি ইতিমধ্যেই খাতায় কলমে নির্মল গ্রাম হিসাবে ঘোষিত হয়েছে৷ কিন্তু তারপরেও অনেককে মাঠে যেতে দেখে জেলাশাসক নিজেই তাদেরকে ধরে ফেলেন৷ পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘সাইলি এলাকায় যারা এ দিন মাঠে গিয়ে ধরা পড়লেন তাদের প্রত্যেকেরই বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও বহুদিনের অভ্যাসের জন্য তাঁরা মাঠে শৌচকর্মে যান৷’’

রাজগঞ্জের কুকুরজান এলাকায় গিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অম্লানজ্যোতি সাহা৷ ওই এলাকাটি এখনও নির্মল ঘোষণা হয়নি৷ তবে জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবাক হয়ে দেখেন, স্মার্ট ফোন কিংবা গলায় সোনার চেন ব্যবহার করা অনেককেই মাঠে শৌচকর্ম করতে যাচ্ছেন৷ অম্লানবাবু বলেন, ‘‘ভাবতে অবাকই লাগে যে, এত উন্নত জীবন-যাপন করেও কিছু মানুষ বাড়িতে শৌচাগার বানাননি৷’’

প্রশাসনের কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, গোটা জেলাকে নির্মল করার লক্ষে নজরদারি আরও বাড়াবেন তাঁরা৷ এ দিন মাঠে যাওয়া কিছু মানুষকে প্রশাসনের কর্তারা সাফ জানিয়ে দেন, এরপর এমনটা করতে দেখা গেলে ছবি তুলে এলাকায় টাঙিয়ে দেওয়া হবে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE