ফাইল চিত্র।
ছেলেধরার দল এলাকায় ঘুরছে, দিনকয়েক ধরে লোকমুখে এমনই ফিরছিল ক্রান্তি এলাকায়। সোমবার যা নিয়ে তুলকালাম হল তিস্তা পাড়ের এই জনপদে, ভাঙল পুলিশের পাঁচটি গাড়ি। ভাঙচুর হয়েছে অন্তত দশটি বাইক, আক্রান্ত হয়েছে ক্রান্তি পুলিশ ফাঁড়িও, জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী সহ এসডিপিও।
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন দুপুরে, একটি ছোটগাড়িতে দুজন এসে ক্রান্তি বাজারের বাসিন্দা এক যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা দু’জনকে আটকে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে আরও দুই এলাকা থেকে ছেলেধরা সন্দেহে চার যুবককে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। এই যুবকরা সকলেই ভিন্ জেলার বলে জানা গিয়েছে। তারা নানা জিনিস ফেরি করছিল। ফাঁড়িতে ছেলেধরার দলকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই কয়েকশো বাসিন্দা ভিড় করে থানায়। ছেলেধরা সন্দেহে আটক সকলকে জনতার হাতে তুলে দিতে হবে দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। উন্মত জনতা চিৎকার করতে থাকে, ‘‘বিচার এখানেই হবে। সবকটাকে ফাঁসিতে ঝোলাব।’’
ফাঁড়িতে তখন পুলিশের সংখ্যা বাড়ন্ত। ক্ষিপ্ত জনতা ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করে। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলি এক এক করে ভাঙচুর হয়। জনতার হাত থেকে রেহাই পাননি পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়া করিমুল হকও। থানার পাশে থাকায় তিনি ঢিলের ঘায়ে জখম হয়েছেন। জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। বুকে ঢিল লেগেছে মালবাজারের এসডিপিও দেবাশিস চক্রবর্তীরও।
দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত কয়েক দফায় ফাঁড়িতে আক্রমণ হয়েছে। রাত আটটা নাগাদ ফাঁড়িতে পৌঁছন জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি। তখনও ফাঁড়ি ঘিরে কয়েকশ মানুষ। ইঁট-ঢিল থানায় আছড়ে পড়ছে তখনও। জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ বাহিনী পৌঁছয় ক্রান্তিতে। রাতের দিকে পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। পুরোটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যাদের ধরে আনা হয়েছে তাঁরা ছেলেধরা কি না এবং কে বা কারা জনতাকে এ ভাবে খেপিয়ে তুলল তাও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে এ দিন দুপুরে একটি ছোট গাড়িতে দুই যুবক এসে ক্রান্তি বাজারের বাসিন্দা দিলীপ রায়কে রাস্তা চিনিয়ে দিতে বলে। দিলীপ সেই গাড়িতে ওঠে। পরে জোর করে করে দিলীপকে মদ খাইয়ে তাঁর মুখে কিছু ছিটিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি। কয়েকদিন ধরে এমনটাই ঘুরছিল লোকমুখে। বাইরে থেকে ছেলেধরা দল এসেছে, তারা মুখে কিছু ছিটিয়ে মাবালক এবং যুবকদের জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে ক্রান্তি জুড়েই রব উঠেছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিলীপ রায়কে নিয়ে ক্রান্তিরই একটি হোটেলের সামনে গাড়িটি দাঁড়ায়। সে সময় টলমল পায়ে দিলীপ বাইরে এসে আশেপাশের বাসিন্দাদের সাহায্য চান। তারপরই বাসিন্দারা যুবকদের ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। ভাঙচুর করে গাড়িটি। সেই শুরু। ফাঁড়িতে ছেলেধরাদের নিয়ে আসা হয়েছে এই কথা সোশাল মিডিয়া, মোবাইল অ্যাপসে প্রচার হতে থাকে। ভিড় জমতে থাকে ফাঁড়ির সামনে। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মালদহ সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় ছেলেধরা-গুজব উড়ছে। এ দিন দুপুরে যখন প্রথম দু’জনকে বাসিন্দারা ফাঁড়িতে নিয়ে এল তখনই ক্ষোভের আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল বলে পুলিশের একাংশের দাবি। সে সময়ই বাড়তি বাহিনী পাঠালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না বলে দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy