Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওয়ার্ডে খায়, ঘুমোয়ও

আবার ওয়ার্ড থেকে বেড়াল তাড়াতে গিয়ে আক্রমণের মুখেও পড়েছেন কোনও নার্স।

ঘোরাঘুরি: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কুকুর।

ঘোরাঘুরি: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কুকুর।

কিশোর সাহা 
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

ওয়ার্ডে থাকে। ওয়ার্ডেই ঘুমোয়। সেখানেই খাওয়া-ঘুম। এমনকি, ছানাপোনা নিয়ে দিব্যি ঘরসংসার চলছে সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি কুকুর-বেড়ালের। কখনও ছানার গায়ে ধাক্কা লাগায় স্বাস্থ্যকর্মীকে কামড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আবার ওয়ার্ড থেকে বেড়াল তাড়াতে গিয়ে আক্রমণের মুখেও পড়েছেন কোনও নার্স।

হ্যাঁ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছবিটা এমনই। তাই এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে কুকুর ছানা পিটিয়ে মারার ঘটনার পরে তাই ঘুম ছুটেছে কর্তৃপক্ষের। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার অফিসারদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এনআরএসের মতো এখানেও না হঠাৎ এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে যায়!

তবে আপাতত কুকুর তাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই বলে সুপার জানিয়‌েছন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচিল দেওয়ার কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে, গৃহপালিত পশুপাখি ঢুকে পড়ে। আবার সুলভে খাবারের উচ্ছিষ্ট মেলে দেখে স্থায়ীভাবে কিছু কুকুর-বেড়ালও থাকে। এদের নির্বীজকরণের কথা ভাবা হচ্ছে। তাই বিডিও ও পুরসভার কমিশনারকে জানিয়ে হস্তক্ষেপ চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ সুপার জানান, যে হেতু পাঁচিল নেই তাই বেওয়ারিশ কুকুর ধরতে মাংসের টোপ দিয়ে খাঁচা পেতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় প্রতিটি করিডরই সন্ধ্যা থেকে রাতভর কুকুর-বেড়ালদের দখলে থাকে। অধ্যক্ষের ঘর থেকে শুরু করে খোলা ক্লাশরুম কিংবা দোতলার ফাঁকা ঘরেও কুকুর-বেড়ালদের ছোটাছুটি চলে রাতভর। সকালে রোগীদের জলখাবার বিলির সময়ে ফের প্রতিটি ওয়ার্ডের আনাচে কানাচে দেখা যায় কুকুরগুলিকে। অনেক সময়ে মেঝেয় শুয়ে থাকা রোগীর মাথার পাশ থেকে পাউরুটি নিয়ে উধাও হয় কুকুরেরা। প্রসূতি বিভাগের পাশেও কুকুরের তাণ্ডব চলে দুপুরে খাবারের সময়ে।

বারবার বিভিন্ন ভাবে কুকুরদের এই দৌরাত্ম্যের কথা পুরসভা ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। আবার পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এত দিন বিষয়টি নিয়ে খুব মন দিয়ে ভাবেননি। এখন এনআরএস নিয়ে হইচই হওয়ায় সকলেরই টনক নড়েছে।

রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অনেকের বক্তব্য, খাবার বিলির পরে কুকুর যাতে ওয়ার্ডের সামনে ঘোরাফেরা করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। উপরন্তু, খাওয়া হয়ে গেলে উচ্ছিষ্ট যেন ওয়ার্ডের বাইরেই কুকুরগুলিকে বিলি করা না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে বলে রোগীরা অনেকেই জানান।

জরুরি বিভাগের পাশে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় দেড় মাস ধরে ভর্তি রয়েছেন শিলিগুড়ির এক যুবক। তিনি বলেন, ‘‘একদিন রাতে পায়চারি করতে গিয়ে দেখি, করিডরে রোগীর বিছানার মধ্যেই গুটিসুটি মেরে শুয়ে রয়েছে দুটি কুকুর। স্যালাইনের স্ট্যান্ড এনে তাড়া করে ভাগিয়েছি।’’

নার্সদের সংগঠনের একাধিক সদস্য জানান, তাঁরা বহুবার কুকুর তাড়াতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। নার্সদের সংগঠনের এক নেত্রী জানান, কয়েক জনকে কুকুরে আঁচড়ে দিলেও পশুপ্রেমীদের রোষের মুখে পড়ার ভয়ে কেউ পাল্টা মার দেয়নি। হাসপাতালের তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সরকার বলেন, ‘‘বেওয়ারিশ কুকুর একটা সমস্যা! সব মাথায় রেখেই সমাধান করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Bengal Medical College Street Dogs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE