Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

একশো দিনে মিলবে কাজ? আশায় পানবাড়ি

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকা লাগোয়া আদিবাদী প্রধান গ্রাম পানবাড়ি। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় তো বটেই, দুর্গমও।

সীতারাম মিনজের বাড়িতে পঞ্চায়েত সদস্য। নিজস্ব চিত্র

সীতারাম মিনজের বাড়িতে পঞ্চায়েত সদস্য। নিজস্ব চিত্র

রাজু সাহা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৭:১১
Share: Save:

এ যেন আর এক উত্থানপতনময় জীবনের গল্প।

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকা লাগোয়া আদিবাদী প্রধান গ্রাম পানবাড়ি। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় তো বটেই, দুর্গমও। সেখানকার বাসিন্দা সীতারাম মিনজ জীবিকার খোঁজে পাঁচ-ছ’বছর আগে পাড়ি দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে। কারণ, বাবার রেখে যাওয়া চার বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে বুনো হাতির দল তাঁদের ততদিন সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। ভিন্ রাজ্যে কাজ করেই স্বচ্ছলতা ফেরে সীতারামদের সংসারে। কিন্তু করোনার ধাক্কায় আবার আগের অবস্থায় ফিরতে বসেছেন তাঁরা। হাতে কাজ নেই, একশো দিনের কাজের জন্য জরুরি জব কার্ডও হয়নি এর মধ্যে। সব থেকে বড় কথা, এলাকায় এত দিন যেখানে জনা ষাটেক একশো দিনের কাজ করতেন, সেখানে এ বারে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক’শোতে। সে কথা মানছেন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিও। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কী ভাবে নিয়মিত রোজগার করবেন সীতারাম মিনজরা?

শুধু সীতারাম নন ছোটেলাল কুজুর, বুধু এক্কা, বিষ্ণু টপ্পো, বাতুয়েল লাকড়ার মতো ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা বহু শ্রমিকের একই রকম পরিস্থিতি। কাজ হারিয়ে প্রবল আর্থিক অনটনে দিন কাটছে তাঁদের। একমাত্র ভরসা রেশনের কয়েক কেজি চাল। সীতারাম বলতে থাকেন, ‘‘কিন্তু শুধু চাল দিয়ে কি সংসার চলে? প্রবল আর্থিক অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাবার রেখে যাওয়া জমি পতিত হয়ে আছে এত দিন। সেখানে চাষ করতে গেলেও তো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। তত দিন বউ বাচ্চাদের খাওয়াব কী?’’ তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন হাতিতে ফসল নষ্ট করত। এখন করোনার ঠেলায় একই অবস্থা আমাদের।’’

ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তথা তুরতুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ কেরকাট্টা জানান, ‘‘আলিওপুরদুয়ার জেলার পানবাড়ি গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবার বসবাস করেন। লকডাউনে কাজ হারিয়ে প্রায় দু’শো জন ফিরে এসেছেন। তাঁদের জব কার্ড দেওয়ার জন্য সার্ভে করা হচ্ছে। সবাইকে কার্ড দিয়ে একশো দিনের কাজেও সামিল করার চেষ্টাও চলছে। এ মুহূর্তে অন্য গ্রামে গিয়ে দুই-একজন দিনমজুরি করছেন। কিন্তু তাতে দিন প্রতি ১৫০-২০০ টাকা মজুরি। তা-ও সবার মিলছে না। জমিতে বিকল্প চাষ করে তাঁদের আয়ের পথ খোলা যায় কিনা সে ব্যাপারে জেলার প্রসাশনিক কর্তা এবং বনদফতরের কাছে আর্জি জানাব।’’

তুরতুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিনা এলমো বলেন, ‘‘তুরতুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন। লকডাউনে সাতশো শ্রমিক ফিরে এসেছেন। সকলের জব কার্ড তৈরি করে একশো দিনের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ তবে তাতে সময় লাগবে বলে মানছেন তিনি।

এই অবস্থায় ফের জমিতে চাষ করার কথা ভাবছেন সীতারামেরা। ‘‘হাতি ফসল নষ্ট করলেও কিছু তো করার নেই,’’ বলছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE