Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপিতে নিশীথের যোগদানে লাভ কার, কোচবিহারে চর্চা তুঙ্গে

দু’দলের কর্মীদের একাংশের মতে, যুব তৃণমূলের একটি বড় অংশ নিশীথের সঙ্গে বিজেপিতে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শাসক দলের অনেকটাই লোকসান।

নিশীথ প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।

নিশীথ প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৭:২৯
Share: Save:

যুব তৃণমূল নেতা হিসেবে নিজস্ব সংগঠন তিনি অনেকটাই সফল হয়েছিলেন বলে খবর দল সূত্রেই। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই যুব তৃণমূল কর্মীদের একটি অংশ টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়ায় বলেও জানাচ্ছেন দলের কর্মীদের একাংশ। পরে অবশ্য দল তাঁকে বহিষ্কার করে। সেই নিশীথ প্রামাণিক বিজেপিতে যোগদান করায় লোকসভা ভোটের মুখে কোচবিহারে বিজেপি লাভবান হল কি না সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দু’দলের নেতা-কর্মীদের মুখে।

দু’দলের কর্মীদের একাংশের মতে, যুব তৃণমূলের একটি বড় অংশ নিশীথের সঙ্গে বিজেপিতে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শাসক দলের অনেকটাই লোকসান। অন্য অংশের মতে, তৃণমূলে থেকে বিজেপির হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল নিশীথের বিরুদ্ধে। নিজস্ব কিছু অনুগামী তৈরি করে বিজেপিতে যাওয়া তাঁর লক্ষ্য ছিল বুঝতে পেরেই তৃণমূল তাঁকে বহিষ্কার করে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তাই নিশীথের সিদ্ধান্তে লোকসানের বদলে তৃণমূলের লাভই হয়েছে বলে মনে করছেন দলের অনেক কর্মী। নিশীথবাবু নিজে অবশ্য বলেন, “জেলায় ফিরে সংগঠনের কাজ শুরু করব। সময়ই সব কথা বলবে।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, নিশীথবাবুর প্রভাব রয়েছে মূলত দিনহাটায়। তার বাইরে কোচবিহারের দুই-একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সংগঠন তৈরি করেছিলেন তিনি। বিজেপি কর্মীদের দাবি, দিনহাটা-১ নম্বর ব্লকে নির্দল হয়ে জয়ী কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যেতে পারেন। তাতে লোকসভা ভোটের মুখে ওই অংশে বিজেপি কিছুটা লাভবান হতে পারে। যদিও নিশীথবাবুর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে বরাবর। পুজো এবং একাধিক অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরচের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিশাল কনভয় নিয়ে তিনি যাতায়াত করতেন। সেই টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর বাইরে দল তাঁকে বহিষ্কার করায় অনেকেই তাঁর পিছন থেকে আগেই সরে যায়। সেক্ষেত্রে কতজনকে তিনি বিজেপিতে নিয়ে যেতে পারেন তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রায় বলেন, “তৃণমূলে এখন আর কেউ থাকতে চাইছে না। ওই দল দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়েছে। সবাই বিজেপিতে আসছে। তাই দলের শক্তি বাড়ছে।”

তৃণমূল নেতাদের অনেকের অবশ্য অবশ্য দাবি, যুব ও মূল তৃণমূলের মধ্যে গন্ডগোলের মূলে ছিলেন নিশীথ। দলের নির্দেশ তিনি কখনও মানেননি বলে অভিযোগ। সে জন্যেই ঘাসফুলের বিরুদ্ধে নির্দল প্রতীকে দিনহাটার বহু আসনে তিনি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেন বলে দাবি অনেকের। তৃণমূলকর্মীদের অনেকের দাবি, তলে তলে তাঁর সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতারও প্রমাণও দল পায়। তাঁর চালচলন সাধারণ মানুষ ভালভাবে নেয়নি বলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলেও অভিযোগ। কোচবিহারে তৃণমূলের সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “দলে থেকে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন যারা তাঁদের সঙ্গে কেউ থাকে না। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের লোকসান হওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। তৃণমূল আরও শক্তিশালী হল।” যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “সংগঠন থেকে থেকে বহু আগেই নিশীথবাবুকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

নিশীথবাবুর অনুগামীদের অবশ্য দাবি, তাঁর নেতৃত্বেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু জায়গায় ভাল ফল করে তৃণমূল। নির্দল হয়ে জয়ী প্রত্যেককেই দলীয় পতাকার নীচে নিয়ে যান নিশীথবাবু। তৃণমূলের অনেক নেতা যেখানে দুর্নীতি ও খারাপ কাজ করে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছেন, সে জায়গায় নিশীথবাবুর জনপ্রিয়তা গোটা জেলায় বাড়ে। তাতেই নানা ছক তৈরি করে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে তাঁদের দাবি। তাঁর অনুগামী এক নেতার কথায়, “মানুষ যে দাদার সঙ্গেই আছেন তা অল্প সময়ে টের পাবেন সবাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE