Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শীতের রাতে পাহাড়ি পথে প্রসব মাতৃযানে

শীতের সন্ধ্যায় হঠাৎই উঠেছিল প্রসব যন্ত্রণা। রাত ৮টা নাগাদ পাহাড়ের তাপমাত্রা তখন সাড়ে ৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। কার্শিয়াং মহকুমার মামরিং বস্তির খারাপ রাস্তায় গর্ভবতী ইন্দ্রামিত এবং তার পরিবার দ্রুত গাড়ি কোথায় পাবেন

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

শীতের সন্ধ্যায় হঠাৎই উঠেছিল প্রসব যন্ত্রণা। রাত ৮টা নাগাদ পাহাড়ের তাপমাত্রা তখন সাড়ে ৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। কার্শিয়াং মহকুমার মামরিং বস্তির খারাপ রাস্তায় গর্ভবতী ইন্দ্রামিত এবং তার পরিবার দ্রুত গাড়ি কোথায় পাবেন? মাতৃযান ডাকার জন্য দেরি না করে স্ত্রীকে স্বামী বুদ্ধ আর কয়েক জন আত্মীয় সঙ্গে নিয়ে সিটং থেকে হেঁটেই রওনা দিয়েছিলেন। মাঝপথে যন্ত্রণা অসহ্য হলে ডাকা হয় মাতৃযান। কিন্তু অসুস্থ ইন্দ্রামিতের প্রসব করেন মাতৃযানেই।
সিট‌ং পঞ্চায়েতের মামরিং থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার পথ কার্শিয়াং মহকুমা হাসপাতাল। অনেকটা পথ হেঁটে আসার পরে তাঁরা বুঝতে পারে গাড়ি ডাকা ছাড়া উপায় নেই। তারপর গাড়ি এসে তাঁদের তুলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনাও হয়েছিল। মাঝপথে কয়লাগোদাম এলাকায় পথেই প্রসব হয় ২৮ বছরের ইন্দ্রামিতের। সেই সময় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির ডিভিশনাল ম্যানেজার সৌমিত্র দেব ওই দিক দিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনা দেখে খবর দেন মহকুমা শাসককে। তারপর থেকেই শুরু হয় জরুরীকালীন তৎপরতায় ওই মহিলা এবং তার নবজাকতকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা। কার্শিয়াংয়ের মহকুমাশাসক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনা জানতে পেরেই সবাইকে ফোন করি। এলাকার একজন নার্সকে তাঁর বাড়ি থেকে পাঠানো হয়।’’
মঙ্গলবার রাতে মাতৃযানে প্রসবের সময় ওই মহিলার পাশে সেই সময় পরিবারের লোক, গাড়ির চালক ছাড়া কেউ ছিলেন না। স্বাস্থ্যকর্মী বা প্রশিক্ষিত নার্স না থাকায় কাটা যায়নি মা ও শিশুর নাড়ি। এই ভাবেই দু’জনে ছিলেন গাড়িতে। চালক ওই অবস্থায় গাড়ি চালাতেও ভয় পাচ্ছিলেন। শেষে শীতের কনকনে ঠান্ডার রাতে খবর পেয়ে কার্শিয়াং মহকুমা প্রশাসন উদ্যোগী হয়। প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় একজন নার্সকে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়। তার পরেই তাঁর সঙ্গেই মা ও শিশুকে পাঠানো হয় হাসপাতালে।
আগে থেকেই অপারেশন থিয়েটার রেডি রাখতে বলা হয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তারপর অস্ত্রোপচার করে মা ও বাচ্চাকে বাঁচানো হয়। কার্শিয়াং হাসপাতালের সুপার রুমি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা আগেই খবর পেয়েছিলাম। তাই সমস্ত প্রস্তুতি তৈরি ছিল।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, কিছু দিন আগে আগুনে ইন্দ্রামিতের নিম্নাঙ্গ পুড়ে যায়। মঙ্গলবারই ওই গর্ভবতী রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না করে ইন্দ্রামিতকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় তাঁর পরিবার। তাতেই বিপদ বেড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে কার্শিয়াং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এখন মা ও তাঁর পুত্রসন্তান এখন পুরোপুরি সুস্থ বলে জানিয়েছে ডাক্তাররা।
ইন্দ্রামিতের স্বামী বুদ্ধ বলেন, ‘‘সিটং পঞ্চায়েতের মামরিংয়ে চাষবাস করি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওই রাতে গাড়ি খুঁজতে গেলে দেরি হয়ে যেত। তাই পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, যাওয়ার পথেই মাতৃযান ডেকে নেব। সবাই মিলে আমার পাশে না দাঁড়ালে হয়ত স্ত্রী ও ছেলেকে বাঁচাতে পারতাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Siliguri Health Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE