Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডুয়ার্সে কাঠপাচার যেন কুটির শিল্প

তাদের মূল কাজ কাঠ মাফিয়াদের অর্ডার অনুযায়ী জঙ্গল থেকে কাঠ কাটা। কবে কোন জঙ্গলে অপেক্ষাকৃত কম নজরদারি কবে, তা জেনেই দিনে বা রাতে তারা কাঠ কাটেন জঙ্গলে।

কাঠ: সাইকেলে কাঠ। নিজস্ব চিত্র

কাঠ: সাইকেলে কাঠ। নিজস্ব চিত্র

নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

কাঠপাচার এখন ডুয়ার্সের কুটির শিল্প, অন্তত তেমনটাই মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। জলদাপাড়া থেকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামগুলোতে রমরমিয়ে চলছে চোরাই কাঠের ব্যবসা। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন বনকর্তারাও। অভিযান চলেলো জঙ্গলে কাঠ মাফিয়াদের বারবাড়ন্তয় চিন্তিত বনকর্তারা।

দৃশ্য এক, জলদাপাড়ার মুন্সিপাড়া, শালকুমার হাট এলাকায় দিন দুপুরে সাইকেলই নিয়ে চলছে কাঠপাচার। আশপাশ দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করলেও কাঠপাচারকারীদের দেখেও দেখছেন কেউ। প্রশ্ন করতে জানা গেল এ চিত্র নিত্যদিনের।

দৃশ্য দুই, তপসিখাতা কালজানি নদীর ঘাটপাড় এলাকাতেও সাইকেল নিয়ে চলছেন দুই ব্যক্তি। দু’জনে সাইকেলের দু’ধারে সেগুন কাঠ বাঁধা। স্থানীয় ভাষায় এরা ক্যারিয়ার। কাঠ পৌঁছে দেওয়া কাজ। সে পাশের জেলা কোচবিহার হোক বা ক্রেতার বাড়িতে। দিনের আলোতে অবাধ যাতায়াত।

কী ভাবে হয় এই কাঠপাচার? জঙ্গল সংলগ্ন চাবাগান, কুমারগ্রাম, নিউল্যান্ডস, জয়ন্তী কোহিনুর, চুনিয়াঝোরা, গাঙ্গুটিয়া, ভাটপাড়া, রাধারানি, কালচিনি, বীরপাড়া, হান্টাপাড়া, মধু, বান্দাপানি সহ বনবস্তির বাসিন্দাদের একাংশ জড়িত থাকেন কাঠ পাচারে।

তাদের মূল কাজ কাঠ মাফিয়াদের অর্ডার অনুযায়ী জঙ্গল থেকে কাঠ কাটা। কবে কোন জঙ্গলে অপেক্ষাকৃত কম নজরদারি কবে, তা জেনেই দিনে বা রাতে তারা কাঠ কাটেন জঙ্গলে। জঙ্গলের বড় বড় শাল, সেগুন ও গামারি গাছ ছোট ছোট গুড়িতে ভাগ করা হয়। অভিযোগ, নিজেদের তৈরি রাস্তা দিয়ে গ্রামে বা চাবাগানে নিয়ে আসা হয় কাঠ। কারও কারও অভিযোগ, সেখান থেকে চলে যায় মাফিয়াদের আস্তানায়। মাফিয়াদের হাত হয়ে চোরাই করাত কলে কাঠ গুলো অপেক্ষাকৃত ছোট টুকরো করা হয়। সাইকেলে বা গাড়িতে করে করে যায় বিভিন্ন গ্রামে। এখান থেকেই যোগাযোগ হয় ক্রেতা ও বিভিন্ন দোকানদারের সঙ্গে। চাহিদা মতো দরজা জানলা বা আসবারের মাপে কাটা হয় কাঠ। তা নিদিষ্ট গন্তব্য পৌঁছে দেন সাইকেল ক্যারিয়াররা। চোরাই কাঠের দাম ও ক্যারিয়ারের খরচ আলাদা দিতে হয় ক্রেতাকে।

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘‘কাঠ পাচারের অভিযোগ রয়েছে সর্বত্র। কাঠ কেটে চাবাগানে লুকিয়ে রাখা থাকে। কখনও বনকর্মীদের নজর এড়াতে নদীর চরে পুঁতে রাখা হয় চোরাই কাঠ। বিনয়বাবু বলেন, তবে আগের থেকে কাঠ কাটা অনেকটাই কমেছে। বনকর্মীরা নজর রাখেছে।

ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেশ বসু জানান, বক্সা জলদাপড়ায় জঙ্গল সাফ হচ্ছে। অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কাঠ কাটা রুখতে বনকর্মীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত জানান, কার্যত কুটির শিল্পের রুপ নিয়ে চোরাই কাঠের ব্যবসা। অধিকাংশ গ্রাম ও বনবস্তিত গেলেই মিলবে চোরাই কাঠ। এক কথায় বনদফতর ব্যর্থ। শীঘ্র ব্যবস্থা না নিলে জঙ্গলে শেষ হয়ে যাবে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি কল্যাণ রাই স্বীকার করেন, জঙ্গলে দল বেঁধে ঢোকে কাঠচোররা। কাঠচোরদের রুখতে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। প্রয়োজন বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর।

জলদাপাড়া বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল জানান, বনকর্মীরা চেষ্টা করছেন। প্রয়োজন সামাজিক চেতনার। কাঠ কাটা রুখতে অভিযান চালানো হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বনাধিকারিক জানান, ‘‘জঙ্গলে এক সঙ্গে তিরিশ থেকে চল্লিশ জনের দল ঢোকে কাঠ কাটতে। তাঁদের আটকানো মুশকিল। বনকর্মীদের হাতে আত্মরক্ষার জন্য আধুনিক অস্ত্র নেই। অনেক সময় হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে অভিযান চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wood trafficking cottage industries
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE