Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
অভিযোগ কোচবিহারে

বিরিয়ানির সঙ্গে কর্মীরা পাচ্ছেন দৈনিক ভাতাও

কারও মেনু মাংস-ভাত। কেউ প্যাকেটে বিলোচ্ছেন বিরিয়ানি। সিঙারা, মিষ্টিও খাওয়াচ্ছেন। তার উপরে দিনের শেষে মিলছে হাজিরাও। তিনশো থেকে সাতশো টাকায় দিনরাত এক করে খাটছেন অনেকেই। অভিযোগ, পুরভোটের প্রচার শেষের মুখে এভাবেই সক্রিয় কর্মীদের ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও নেতারা। তবে এ নিয়ে যুযুধান সব পক্ষই পরস্পরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ঘিরে সরগরম কোচবিহারের পুরভোট আবহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

কারও মেনু মাংস-ভাত। কেউ প্যাকেটে বিলোচ্ছেন বিরিয়ানি। সিঙারা, মিষ্টিও খাওয়াচ্ছেন। তার উপরে দিনের শেষে মিলছে হাজিরাও। তিনশো থেকে সাতশো টাকায় দিনরাত এক করে খাটছেন অনেকেই। অভিযোগ, পুরভোটের প্রচার শেষের মুখে এভাবেই সক্রিয় কর্মীদের ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও নেতারা। তবে এ নিয়ে যুযুধান সব পক্ষই পরস্পরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ঘিরে সরগরম কোচবিহারের পুরভোট আবহ।

জেলার কোচবিহার, তুফানগঞ্জ, দিনহাটা ও মাথাভাঙা পুরসভার ভোট। শহর লাগোয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকেও ‘দাপুটে’ কর্মীদের এনে পুর এলাকায় জমায়েত করার অভিযোগ উঠেছে। ওই কর্মীদের পছন্দের মেনুর সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক হাজিরাও দিতে হচ্ছে বলে রাজনৈতিক দলগুলি একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। বামেদের অভিযোগ, কোচবিহারে সুটকাবাড়ি, টাকাগছ, ডাউয়াগুড়ি ও সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কর্মীদের শহরে আনছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে অনেক কর্মী চলেও এসেছেন। বাড়ি ভাড়া করে তাঁদের রাখা হচ্ছে। বিজেপিও কর্মীদের জন্য একাধিক হোটেলে মুরগির মাংস, গরম ভাতের পেটচুক্তি খাবারের বন্দোবস্ত করেছে।

ফরওয়ার্ড ব্লকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তথা যুবলিগের কোচবিহার জেলা সম্পাদক গোপাল দে বলেন, “তৃণমূল গ্রামের লোক এনে কোচবিহারে গোলমাল, বুথ জ্যামের ছক কষেছে। বাড়ি ভাড়া করে দামি হোটেলের বিরিয়ানির প্যাকেট, কেনা জল খাওয়ানো হচ্ছে। বিজেপি আবার হোটেলে মাংসের চাঁপ, ভাত খাওয়াচ্ছে। আমরা প্রচার কর্মসূচির পর লাল চা, বিস্কুটের বেশি দিতে পারছি না।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি বিমল সরকার বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমাদের দলের কর্মীদের কোনও প্রলোভন দিয়ে টানতে হয় না। আগে একা বামেরা খাওয়াদাওয়া হাজিরা দিয়ে লোক খাটাত, এখন তৃণমূলও সেটাই করছে।”

একইভাবে দিনহাটায় ‘বহিরাগত’দের জমায়েত করার অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেখানে মিছিল, মিটিংয়ের সক্রিয় কর্মীদের দৈনিক ৩০০ টাকা করে হাজিরা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। দলের দিনহাটা জোনাল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিশু ধর বলেন, “চুক্তিকর্মীরাই দিনহাটায় তৃণমূলের ভরসা। ওদের দিয়েই সব মিছিল, মিটিং করানো হচ্ছে। দৈনিক ৩০০ টাকা হাজিরা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কর্মীকেও ওরা ওই প্রস্তাব দিয়েছেন।”

তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বামেরা গোলমাল পাকাতে গ্রামের কর্মীদের বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় জমায়েত করছে। তাঁদের দৈনিক ৭০০ টাকা পর্যন্ত হাজিরা দেওয়া হচ্ছে। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ফি বছর দিনহাটা সহ গোটা জেলা জুড়ে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস টাকা দিয়ে আনা ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে ভোট করায়। এ বারেও দিনহাটা শহরে গ্রামের কর্মী বাহিনীকে তাঁরা ঢুকিয়েছেন। ওই কর্মীদের ফরওয়ার্ড ব্লক ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত দৈনিক হাজিরা দেওয়া হচ্ছে। অপপ্রচার করে লাভ হবে না। গোটা জেলাতে আমরা সক্রিয় কর্মীদের টাকা দূর অস্ত, টিফিন পর্যন্ত করাতে পারছি না। ভালবাসার টানেই সবাই আসছে।”

ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “তৃণমূলের ভালবাসা না পয়সার টানে বাইরের লোক আসছেন তা সবাই জানেন।” তুফানগঞ্জ ও মাথাভাঙা পুরসভা এলাকাতেও এমন অল্পবিস্তর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ রয়েছে।

কংগ্রেসের দাবি, তাঁদের তেমন খরচের বহর নেই। কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “মঞ্চ করে সভাই করতে পারছি না, তাই খাওয়া দাওয়া, হাতখরচ দেওয়ার সামর্থ্যও নেই।” আড়াল আবডালে অবশ্য অনেক প্রার্থী মানছেন, অনেককে বাইকের তেলের খরচ থেকে সিগারেট সব খরচ যোগাতে হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE