বিকল: পানিঘাটা চা বাগানে অকেজো হয়ে পড়ে পানীয় জলের কল। —নিজস্ব চিত্র
দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটারের। কিন্তু উন্নয়নের ছবিটা পুরো উল্টো। একদিকে রয়েছে বাগডোগরা। যেখানে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একের পর এক বিমান। তৈরি হয়েছে এশিয়ান হাইওয়ে-২ আর তার উপর ঝাঁ চকচকে একাধিক উড়ালপুল। সরকারি উন্নয়নের মানচিত্রে এখন দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে বাগডোগরাকে। আর এর ১৫ কিলোমিটার দূরে অন্যদিকে রয়েছে বন্ধ পানিঘাটা চা বাগান। যেখানে নদী বা পাহাড়ি ঝোরার অপরিস্রুত জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকরা।
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর বন্ধ হয়েছে পানিঘাটা চা বাগান। বাগানটি মিরিক মহকুমার অন্তর্গত। তিনশোরও বেশি শ্রমিক কাজ করতেন এই বাগানে। দীর্ঘ দিন বাগান বন্ধ থাকায় তাঁদের কেউ কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছে ভিন্ রাজ্যে, কেউ নদী থেকে পাথর তোলার কাজ করে কোনওরকমে দু’বেলা খাবার জোটাচ্ছেন। এরমধ্যে বর্ষায় নদী থেকে পাথর তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এতে আরও বিপাকে পড়েছেন ওই শ্রমিকরা। ফের কাজ হারিয়েছেন তাঁরা।
বাগানের এক শ্রমিক সুমন ওরাওঁয়ের কথায়, ‘‘এমনিতেই খাবার জোটান মুশকিল, তার উপর পানীয় জলের সমস্যা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ শ্রমিক মহল্লায় গিয়ে জানা গিয়েছে, বাগানের বিভিন্ন জায়গায় যেসব সরকারি কল আছে সেগুলো থেকে অনেক বছর ধরেই জল পড়ে না। যখন বাগান চালু ছিল তখন বাগানের পাম্প থেকেই পানীয় জল সংগ্রহ করতেন শ্রমিকরা। কিছুদিন আগে শ্রমিকদের একাংশ নিজেদের উদ্যোগে বাগানের আর একটি অংশে পাম্প বসিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই পাম্প চালান হত বাগানের বিদ্যুৎ দিয়ে। কয়েকদিন আগে সেই বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিয়েছেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা বিল বকেয়া থাকায় তারা সংযোগ কেটে দিয়েছে। এখন ওই পাম্প বন্ধ থাকায় বাগানের শ্রমিকদের স্থানীয় নদী ও ঝোরা থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
বিপজ্জনক পাহাড়ি ঢাল বেয়ে, জঙ্গলের রাস্তা পেরিয়ে জলের খোঁজে যেতে হচ্ছে শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের। নদীতে নেমে সকাল-বিকেল জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। কেউ প্লাস্টিকের জার, কেউ বা বোতলে ভরে বাড়িতে জল নিয়ে যাচ্ছেন। রবিবার নদী থেকে জল নিয়ে আসার সময় মিনতি মিনজ বলেন, ‘‘আমরা নেতাদের দরজায় ঘুরেছি। কেউ কোনও ব্যবস্থা করেননি। কিছুদিন আগে ভোটের সময় এসে নেতারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। এখন কারও পাত্তা পাওয়া যায় না।’’ আর এক শ্রমিক সুরমতি সুব্বা বলেন, ‘‘বাগান বন্ধ, পাথরও তুলতে দিচ্ছে না। এখন শহরে গিয়ে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করছি। সরকার পানীয় জলের ব্যবস্থাও করতে পারছে না।’’
জিটিএর চেয়ারম্যান অনীত থাপা বলেন, ‘‘পানীয় জলের সমস্যার কথা শুনেছি। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy